পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tళరిe রবীন্দ্র-রচনাবলী পার্থক্য ঈশ্বর যে কেবল মানুষকেই পার্থক্য দান করেছেন আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে এক হয়ে রয়েছেন একথা বললে চলবে কেন ? প্রকৃতির সঙ্গেও তার একটি স্বাতন্ত্ৰ্য আছে নইলে প্রকৃতির উপরে তার তো কোনো ক্রিয়া চলত না । তফাত এই যে, মানুষ জানে সে স্বতন্ত্ৰ—শুধু তাই নয়, সে এও জানে যে ওই স্বাতন্ত্র্যে তার অপমান নয় তার গৌরব । বাপ যখন বয়ঃপ্রাপ্ত ছেলেকে নিজের তহবিল থেকে একটি স্বতন্ত্র তহবিল করে দেন তখন এই পার্থক্যের দ্বারা তাকে তিরস্কৃত করেন না— বস্তুত এই পার্থক্যেই তার একটি বিশেষ স্নেহ প্রকাশ পায় এবং এই পার্থক্যের মহাগৌরবটুকু মাহুষ কোনোমতেই ভুলতে পারে না। মানুষ নিজের সেই স্বাতন্ত্র্য-গৌরবের অধিকারটি নিয়ে নিজে ব্যবহার করছে। প্রকৃতির মধ্যে সেই অহংকার নেই, সে জানে না সে কী পেয়েছে। ঈশ্বর এই প্রকৃতিকে কী দিয়ে পৃথক করে দিয়েছেন ? নিয়ম দিয়ে। নিয়ম দিয়ে না যদি পৃথক করে দিতেন তাহলে প্রকৃতির সঙ্গে তার ইচ্ছার যোগ থাকত না । একাকার হয়ে থাকলে ইচ্ছার গতিবিধির পথ থাকে না । ষে লোক দাবাবড়ে খেলায় নিজের ইচ্ছাকে প্রয়োগ করতে চায় সে প্রথমে নিজের ইচ্ছাকে বাধা দেয়। কেমন করে ? নিয়ম রচনা করে। প্রত্যেক ঘুটিকে সে নিয়মে বদ্ধ করে দেয়। এই ষে নিয়ম এ বস্তুত ঘুটির মধ্যে নেই—ষে খেলবে তারই ইচ্ছার মধ্যে । ইচ্ছা নিজেই নিয়ম স্থাপন করে সেই নিয়মের উপরে নিজেকে প্রয়োগ করতে থাকে তবেই খেলা সম্ভব হয়। বিশ্বজগতে ঈশ্বর জলের নিয়ম, স্থলের নিয়ম, বাতাসের নিয়ম, আলোর নিয়ম, মনের নিয়ম, নানা প্রকার নিয়ম বিস্তার করে দিয়েছেন । এই নিয়মকেই আমরা বলি সীমা । এই সীমা প্রকৃতি কোথাও থেকে মাথায় করে এনেছে তা তো নয়। তার ইচ্ছাই নিজের মধ্যে এই নিয়মকে এই সীমাকে স্থাপন করেছে—নতুবা, ইচ্ছা বেকার থাকে, কাজ পায় না। এইজন্তেই যিনি অসীম তিনিই সীমার আকর হয়ে উঠেছেনকেবলমাত্র ইচ্ছার দ্বারা, আনন্দের দ্বারা । সেই কারণেই উপনিষৎ বলেন, “আনন্দাদ্ধ্যেব খৰিমানি ভূতানি জায়ন্তে ।” সেইজন্যেই বলেন “আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি” ধিনি প্রকাশ পাচ্ছেন তার যা কিছু রূপ তা আনন্দরূপ—অর্থাৎ মূর্তিমান ইচ্ছা—ইচ্ছা আপনাকে সীমায় বেঁধেছে, রূপে বেঁধেছে। প্রকৃতিতে ঈশ্বর নিয়মের দ্বার সীমার দ্বারা ষে পার্থক্য স্থষ্টি করে দিয়েছেন সে যদি