পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

අම්ර්‍ය রবীন্দ্র-রচনাবলী । বলতে থাকে-ঈশ্বর নেই, কেবলই এই আছে, এবং এই আছে ; আর আছে, এবং আরও আছে । ঈশ্বরের সমান না হতে পারলে তাকে উপলব্ধি করব.কী করে ? আমরা যতই রেলগাড়ি চালাই আর টেলিগ্রাফের তার বসাই শক্তিক্ষেত্রে আমরা ঈশ্বর হতে অনন্ত দূরে থেকে যাই। যদি স্পর্ধা করে তার সঙ্গে প্রতিষোগিতা করবার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের চেষ্টা আপন অধিকারকে লঙ্ঘন করে ব্যাসকাশীর মতো অভিশপ্ত এবং বিশ্বামিত্রের স্বল্পজগতের মতো বিনাশপ্রাপ্ত হয় । এইজন্যই জগতের সমস্ত ধর্মসাধকের বারংবার বলেছেন, ঐশ্বৰ্ষপথের পথিকদের পক্ষে ঈশ্বরদর্শন অত্যন্ত দুঃসাধ্য। অন্তহীন চেষ্টা চরমতাহীন পথে তাদের কেবলই ভূলিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে যায়। অতএব ঈশ্বরকে বাহিরে অর্থাৎ তার শক্তির ক্ষেত্রে কোনো জায়গায় আমরা লাভ করতে পারি নে। সেখানে যে বালুকণাটির অন্তরালে তিনি রয়েছেন সেই বালুকণাটকে নিঃশেষে অতিক্রম করে এমন সাধ্য কোনো বৈজ্ঞানিকের কোনো যান্ত্রিকের নেই। অতএব শক্তির ক্ষেত্রে যে লোক ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে যায় সে অর্জুনের মতো ছদ্মবেশী মহাদেবকে বাণ মারে—সে বাণ র্তাকে স্পর্শ করে না—সেখানে না হেরে উপায় নেই। h এই শক্তির ক্ষেত্রে আমরা ঈশ্বরের দুই মৃতি দেখতে পাই এক হচ্ছে অন্নপূর্ণ। মৃতি—এই মূর্তি ঐশ্বর্ষের দ্বারা আমাদের শক্তিকে পরিপুষ্ট করে তোলে ; আর এক হচ্ছে করালী কালী মূর্তি—এই মূর্তি আমাদের সীমাবদ্ধ শক্তিকে সংহরণ করে নেয় ; আমাদের কোনো দিক দিয়ে শক্তির চরমতায় যেতে দেয় না – ন টাকায়, না থ্যাতিতে, না অন্ত কোনো বাসনার বিষয়ে। বড়ো বড়ে রাজ্যসাম্রাজ্য ধূলিসাং হয়ে যায়—বড়ে বড়ো ঐশ্বর্যভাণ্ডার ভূক্তশেষ নারিকেলের খোলার মতো পড়ে থাকে। এখানে পাওয়ার মূর্তি খুব সুন্দর, উজ্জল এবং মহিমান্বিত, কিন্তু যাওয়ার মূর্তি, হয় বিষাদে পরিপূর্ণ নয় ংকর। তা শূন্ততার চেয়ে শূন্ততর, কারণ, তা পূর্ণতার অন্তর্ধান । কিন্তু যেমনই হ’ক এখানে পাওয়াও চরম নয়, যাওয়াও চরম নয়—এখানে পাওয়া এবং যাওয়ার আবর্তন কেবলই চলেছে । সুতরাং এই শক্তির ক্ষেত্র মামুষের স্থিতির ক্ষেত্র নয়। এর কোনোখানে এসে মানুষ চিরদিনের মতো বলে না যে এইখানে পৌছোনো গেল ।