পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন HIව কারণ, বড়ো হয়ে উঠতে গেলে, শক্তিশালী হয়ে উঠতে গেলেই অনেকের সঙ্গে মিলতে হয়। এই মিলন সাধনের উপরেই শক্তির সার্থকতা নির্ভর করে। কিন্তু বড়ে রকমে, স্থায়ী রকমে, সকলের চেয়ে সার্থক রকমে, মিলতে গেলেই এমন একটি নিয়মকে স্বীকার করতে হয় যা মঙ্গলের নিয়ম—অর্থাৎ বিশ্বের নিয়ম—অর্থাৎ ধর্মনীতি। এই নিয়মকে স্বীকার করলেই সমস্ত বিশ্ব আমুকুল্য করে—যেখানে অস্বীকার করা যায় সেই খানেই সমস্ত বিশ্বের আঘাত লাগতে থাকে—সেই আঘাত লাগতে লাগতে কোন সময়ে যে ছিদ্র দেখা দেয় তা চোখেই পড়ে না—অবশেষে বহুদিনের কীর্তি দেখতে দেখতে ভূমিসাৎ হয়ে যায়। যারা শক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে কাজ করেন তাদের বড়ো বড়ো সাধকেরা এই নিয়মকে বিশেষ করে আবিষ্কার করেন । তারা জানেন নিয়মই শক্তির প্রতিষ্ঠাস্থল, তা ঈশ্বরের সম্বন্ধেও যেমন মানুষের সম্বন্ধেও তেমনি । নিয়মকে যেখানে লঙ্ঘন করব শক্তিকে সেইখানেই নিরাশ্রয় করা হবে । যার আপিসে নিয়ম নেই সে অশক্ত কর্মী। যার গৃহে নিয়ম নেই সে অশক্ত গৃহী । যে রাষ্ট্রব্যাপারে নিয়ম লঙ্ঘন হয় সেখানে অশক্ত শাসনতন্ত্র । যার বুদ্ধি বিশ্বব্যাপারে নিয়মকে দেখতে পায় না সে জীবনের সর্ব বিষয়েই অশক্ত, অকৃতাৰ্থ, পরাভূত । এইজন্য যথার্থ শক্তির সাধকের নিয়মকে বুদ্ধিতে স্বীকার করেন, বিশ্বে স্বীকার করেন, নিজের কর্মে স্বীকার করেন । এইজন্তেই তারা যোজনা করতে পারেন, রচনা করতে পারেন, লাভ করতে পারেন । এইরূপে তারা যে পরিমাণে সত্যশালী হন সেই পরিমাণেই ঐশ্বৰ্ধশালী হয়ে উঠতে থাকেন। কিন্তু এর একটি মুশকিল হচ্ছে এই যে, অনেক সময়ে তারা এই ধর্মনীতিকেই মানুষের শেষ সম্বল বলে জ্ঞান করেন। যার সাহায্যে কেবলই কর্ম করা যায়, কেবলই শক্তি, কেবলই উন্নতি লাভ করা যায় সেইটেকেই তার চরম শ্রেয় বলে জানেন । এইজন্তে বৈজ্ঞানিক সত্যকেই তার চরম সত্য বলে জ্ঞান করেন এবং সকল কর্মের আশ্রয়ভূত ধর্মনীতিকেই তারা পরম পদার্থ বলে অনুভব করেন। , কিন্তু যারা শক্তির ক্ষেত্রেই তাদের সমস্ত পাওয়াকে সীমাবদ্ধ করে রাখে তারা ঐশ্বর্ধকে পায়, ঈশ্বরকে পায় না। কারণ ঈশ্বর সেখানে নিজেকে প্রচ্ছন্ন রেখে নিজের ঐশ্বর্ধকে উদঘাটন করেছেন। এই অনন্ত ঐশ্বৰ্ধসমুদ্র পার হয়ে ঈশ্বরে গিয়ে পৌছোবে এমন সাধ্য কার আছে। ঐশ্বর্ষের তো অস্ত নেই, শক্তিরও শেষ নেই। সেইজন্তে ওপথে ক্রমাগতই অস্তহীন একের থেকে আরের দিকে চলতে হয়। সেইজন্তেই মানুষ এই রাস্তায় চলতে চলতে