পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা 鸭 ORS সুয়োরানী বললে, “আমার সাতমহলা বাড়ির এক ধারে তিনটে মহল ছিল দুয়োরানীর। তার পরে হল দুটাে, তার পরে হল একটা । তার পরে রাজবাড়ি থেকে সে বের হয়ে গেল। তার পরে দুয়োরানীর কথা আমার মনেই রইল না । তার পরে একদিন দোলযাত্রা। নাটমন্দিরে যাচ্ছি ময়ূরপংখি চড়ে। আগে লোক, পিছে লশকর। ডাইনে বাজে বঁশি, বায়ে বাজে মৃদঙ্গ । এমন সময় পথের পাশে, নদীর ধারে, ঘাটের উপরটিতে দেখি একখানি কুঁড়েঘর, চাপাগাছের ছায়ায় । বেড়া বেয়ে অপরাজিতার ফুল ফুটেছে, দুয়োরের সামনে চালের গুড়ো দিয়ে শঙ্খচক্রের আলপনা, আমার ছত্রধারিণীকে শুধোলেম, আহা, ঘরখানি কার । সে বললে, দুয়োরানীর । তার পরে ঘরে ফিরে এসে সন্ধ্যার সময় বসে আছি, ঘরে প্রদীপ জ্বলি নি, মুখে কথা নেই। রাজা এসে বললে, “তোমার কী হয়েছে, কী চাই ।” আমি বললেম, “এ ঘরে আমি থাকব না।” রাজা বললে, “আমি তোমার কোঠাবাড়ি বানিয়ে দেব গজদন্তের দেওয়াল দিয়ে। শখের ওঁড়োয় মেঝেটি হবে দুধের ফেনার মতো সাদা,মুক্তোর ঝিনুক দিয়ে তার কিনারে ঐকে দেব পদ্মের মালা ।” আমি রিললেম, “আমার বড়ো সাধ গিয়েছে, কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকি তোমার বাহিরবাগানের একটি is রাজা বললে, “আচ্ছা বেশ, তার আর ভাবনা কী।' কুঁড়েঘর বানিয়ে দিলে। সে ঘর যেন তুলে-আনা বনফুল । যেমনি তৈরি হল অমনি যেন মুষড়ে গেল । বাস করতে গেলেম, কেবল লজ্জা পেলেম । তার পরে একদিন স্নানযাত্রা । ” নদীতে নাইতে গেছি। সঙ্গে একশো সাত জন সঙ্গিনী । জলের মধ্যে পান্ধি নামিয়ে দিলে, স্নান शनी | পথে ফিরে আসছি, পান্ধির দরজা একটু ফাক করে দেখি, ও কোন ঘরের বউ গা । যেন নির্মাল্যের ফুল । হাতে সাদা শাখা, পরনে লালপোড়ে শাড়ি । স্নানের পর ঘাড়ায় ক’রে জল তুলে আনছে, সকালের আলো তার ভিজে চুলে আর ভিজে ঘড়ার উপর ঝিকিয়ে উঠছে। ছত্ৰধারিণীকে শুধোলেম, ‘মেয়েটি কে, কোন দেবমন্দিরে তপস্যা করে । ছত্ৰধারিণী হেসে বললে, “চিনতে পারলে না ? ঐ তো দুয়োরানী ।” তার পরে ঘরে ফিরে একলা বসে আছি, মুখে কথা নেই। রাজা এসে বললে, “তােমার কী হয়েছে, কী চাই।' আমি বললেম, “আমার বড়ো সাধ, রোজ সকালে নদীতে নেয়ে মাটির ঘাড়ায় জল তুলে আনব বকুলতলার রাস্তা দিয়ে ।” রাজা বললে, “আচ্ছা বেশ, তার আর ভাবনা কী ।” রাস্তায় রাস্তায় পাহারা বাসল, লোকজন গেল সরে । সাদা শাখা পরলেম আর লালপোড়ে শাড়ি । নদীতে স্নান সেরে ঘাড়ায় করে জল তুলে আনিলেম । দুয়োরের কাছে এসে মনের দুঃখে ঘড়া আছড়ে ভাঙলেম । যা ভেবেছিলেম তা হল না, শুধু লাজা পেলেম । তার পরে সেদিন রাসযাত্ৰা । মধুবনে জ্যোৎস্নারাতে ঠাবু পড়ল। সমস্ত রাত নাচ হল, গান হল। পরদিন সকালে হাতির উপর হাওদা চড়ল। পর্দার আড়ালে বসে ঘরে ফিরছি, এমন সময় দেখি,