পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা S}ዓ እs ९ কথিকা এবার মনে হল, মানুষ অন্যায়ের আগুনে আপনার সমস্ত ভাবী কালটাকে পুড়িয়ে কালো করে দিয়েছে, সেখানে বসন্ত কোনোদিন এসে আর নতুন পাতা ধরাতে পারবে না। মানুষ অনেক দিন থেকে একখানি আসন তৈরি করছে। সেই আসনই তাকে খবর দেয় যে, তার দেবতা আসবেন, তিনি পথে বেরিয়েছেন । যেদিন উন্মত্ত হয়ে সেই তার অনেক দিনের আসন সে ছিড়ে ফেলে সেদিন তার যজ্ঞস্থলীর ভগ্নবেদী বলে, “কিছুই আশা করবার নেই, কেউ আসবে না।” তখন এত দিনের আয়োজন আবর্জনা হয়ে ওঠে । তখন চারি দিক থেকে শুনতে পাই, “জয়, পশুর झंश ' তখন শুনি, “আজও যেমন কালও তেমনি । সময় চোখে-ঠলি-দেওয়া বলদের মতো, চিরদিন একই ঘানিতে একই আর্তম্বর তুলছে। তাকেই বলে সৃষ্টি । সৃষ্টি হচ্ছে অন্ধের কান্না ।” মন বললে, “তবে আর কেন । এবার গান বন্ধ করা যাক । যা আছে কেবলমাত্র তারই বোঝা নিয়ে ঝগড়া চলে, যা নেই তারই আশা নিয়েই গান ৷” শিশুকাল থেকে যে পথের পানে চেয়ে বারে বারে মনে অগমনীর হাওয়া লেগেছে— যে পথ দিগন্তের দিকে কানু পেতেছে দেখে বুঝেছিলুম, ও পার থেকে রথ বেরোল- সেই পথের দিকে আজ তাকালেম ; মনে হল, সেখানে না আছে আগন্তুকের সাড়া, না আছে কোনো ঘরের। বীণা বললে, “দীর্ঘ পথে আমার সুরের সাথি। যদি কেউ না থাকে। তবে আমাকে পথের ধারে ফেলে Fió " তখন পথের ধারের দিকে চাইলুম। চমকে উঠে দেখি, ধুলোর মধ্যে একটি কঁাটাগছ ; তাতে একটিমাত্র ফুল ফুটেছে। আমি বলে উঠলুম, “হায় রে হয়, ঐ তো পায়ের চিহ্ন ৷” তখন দেখি, দিগন্ত পৃথিবীর কানে কানে কথা কইছে ; তখন দেখি, আকাশে আকাশে প্রতীক্ষা। তখন দেখি, চাদের আলোয় তালগাছের পাতায় পাতায় কঁপনি ধরেছে ; বঁাশঝাড়ের ফঁাক দিয়ে দিঘির ঈলের সঙ্গে টাদের চোখে চোখে ইশারা । পথ বললে, “ভয় নেই।” আমার বীণা বললে, “সুর লাগাও।” RNyess