পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় NşÇe বহুবচনরাপ, যেমন “আছেন । আমাদের সৌভাগ্যক্রমে পরবতী বাংলাভাষায় ক্রিয়াপদের বহুবচনের চিহ্ন থাকলেও তার অর্থ হয়েছে লোপ। সংস্কৃতে বহুবচনে ‘পতন্তি' শব্দ আছে প্ৰথমপুরুষের পতন বোঝাতে। বাংলায় সেই অন্তি’র না রয়েছে ‘পড়েন শব্দে, কিন্তু এ ভাষায় তিনি ও পড়েন “র্তারাও পড়েন। এই নাকারধারী ক্রিয়াপদ কেবল “আপনি আর ‘আপনারা”, “তিনি ও “র্তারা, এঁদের সম্মান রক্ষার কাজেই নিযুক্ত। প্রাচীন রামায়ণে এইরূপ স্থানে প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় পড়েন্ত “দেখিলোিন্ত প্রভৃতি স্ত-বিশিষ্ট ক্রিয়াপদ একবচনে এবং বহুবচনে, প্রথমপুরুষে। সদ্য অতীত কালের প্রথম পুরুষ ক্রিয়াপদে বিকল্পে ইল এবং ইলে প্রয়োগ হয়। যেমন : সে ফল পাড়ল, সে ফল পাড়লে । এই একার প্রয়োগ প্রাচীন পদাবলীতে দৈবাৎ দেখেছি, যথা : বিধিলে বাণ । কিন্তু অনেক দেখা গেছে ময়নামতীর গানে, যেমন : বিকল দেখি হাড়িপা রহিলে। এ সম্বন্ধে একটা সাধারণ নিয়ম এই যে, অচেতনবাচক শব্দের ক্রিয়াপদে 'এ' লাগে না । অসমাপিকাতে লাগে, যেমন : পা ফুললে ডাক্তার ডেকে । “তার পা ফুলিলা হয়, ‘পা ফুললে হয় না। নির্বত্তক শব্দ সম্বন্ধেও সেই কথা : তার কলকাতায় যাওয়া ঘটল না। “ঘটলে না হতে পারে না । এ ছাড়া নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্রিয়াপদে 'এ' খাটে না ; এল গেল হল, পল (পড়ল), মাল (মরাল)। দুই অক্ষরের ক্রিয়াপদমাত্রে এই ব্যতিক্রম হয় এমন যেন মনে করা না হয়। তার প্রমাণ ; খেল নিল দিল শুল ধূল। ইতে-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে ‘এ’ লাগে না, যেমন : করতে থাকল, হাসতে লাগল। কিন্তু ইয়া-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে লাগে, যেমন: সে হেসে ফেললে। এ ছাড়া আরো দুই-এক জায়গায় কানে সন্দেহ ঠেকে, যেমন ‘ভোর বেলায় সে মরলে বলি নে, মরলেই ঠিক শোনায় । কিন্তু "তিনি মরলেন, নিত্যব্যবহৃত । SBDBDBB rBDS DD OS DD SDB DBDD LDD DBDB BB BDB DD SS প্রাচীন রামায়ণে দেখা গেছে প্ৰথমপুরুষের সদ্য অতীত ক্রিয়াপদে প্রায় সর্বত্রই ক-প্রত্যয়-সমেত একার, যেমন : দিলেক লইলেক । আবার একরের সম্পর্ক নেই এমন দৃষ্টান্তও অনেক আছে, যেমন : চলিল সত্বর, পাঠাইল তুরিত। আধুনিক বাংলায় এইরূপ ক্রিয়াপদে কোথাও 'এ লাগে কোথাও লাগে না, কিন্তু অন্তস্থিত ক-প্ৰত্যয়টা খসে গেছে । প্ৰথমপুরুষ ইল-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদে এই-যে একার প্রয়োগ, এরই সঙ্গে সম্ভবত 'করলেম 'চললেম' শব্দের একার-উচ্চারণের যোগ আছে। করলেন (করিল তিনি), আর, করলেম (করিল। আমি) : এক নিয়মে পাশাপাশি বসতে পারে । আরো একটা কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে, সে হচ্ছে স্বরবিকারের নিয়ম। ইর পর আ থাকলে দুইয়ে মিলে 'এ' হয় তার অনেক দৃষ্টান্ত মেলে। যেমন "ঈশান থেকে ঈশেন’, ‘বিলাত থেকে ‘বিলেত’, ‘নিশান থেকে ‘নিশেন ৷ এক কালে “মুই ভদ্র সমাজে ত্যাজ্য ছিল না। প্রাচীন রামায়ণে পাওয়া যায় মুঞি নরপতি । কর্মকারকে “মোকে', কোথাও বা ‘মোখে । বহুবচনে ‘মোরা ; আজ "মোরা রয়ে গেছে। কাব্যলোকে । কবির কলমে “আমরা শব্দের চেয়ে ‘মোরা' শব্দের চলন বেশি। প্রাচীন বাংলায় ‘আমরা’, ‘তোমরা'র পরিবর্তে “আমিসব “তুমিসব শব্দের ব্যবহার প্রায়ই দেখা গেছে। আমি তুমি আপনি তিনি : ব্যক্তিবাচক সর্বনাম, মানুষ সম্বন্ধেই খাটে। “সে কেবলমাত্র মানুষ নয় জন্তু সম্বন্ধেও খাটে, যেমন : কুকুরটাকে মারতেই সে চেচিয়ে উঠল। “সে থেকে বিশেষণ শব্দ হয়েছে। 'সেই । এর প্রয়োগ সর্বত্রই : সেই মানুষ, সেই গাছ, সেই গোরু । ‘এ’ থেকে হয়েছে 'এই । ‘এ’ বোঝায় কাছের বর্তমান পদার্থকে, “সে বোঝায় অবর্তমানকে । সম্মানার্থে 'এ' থেকে হয়েছে “ইনি । বাংলা ভাষার একটা বিশেষত্ব এই যে, সর্বনামে লিঙ্গভেদ নেই। ইংরেজিতে প্ৰথমপুরুবে he পুংলিঙ্গ, she স্ত্রীলিঙ্গ, it কীবলিঙ্গ । ইংরেজিতে যদি বলতে হয়, সে পড়ে গেছে, তবে সেই প্রসঙ্গে he she বা it বলাই চাই। বাংলায় ক্লীবলিঙ্গের নির্দেশ আছে, কিন্তু স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গের নেই। সে এ ও তিনি ইনি উনি ; শ্ৰীও হয়, পুরুষও হয়। ক্লীবলিঙ্গে ‘সে 'এ' 'ও' শব্দে নির্দেশক চিহ্ন যোগ করা চাই, যেমন : সেটা। ওটা সেখানা ওখানা। বাংলা কাব্যে এই প্ৰথমপুরুষ সর্বনামে যখন ইচ্ছাপূর্বক লিঙ্গ নির্দেশ করা হয় না। তখন তার ইংরেজি তর্জমা অসম্ভব হয়। 'ৰ্থে সর্বনাম পদের সঙ্গে কোনাে-না