পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8è8 রবীন্দ্র-রচনাবলী গাজিয়ে-ওঠা পচা জিনিসের মতো যত-কিছু বিকৃতি নিয়ে সে নিজেকে ঝাঝিয়ে তোলে লজ্জা এবং ঘৃণা ত্যাগ ক’রে তবে তার বলিরেখাগুলোর মধ্যে হাসির প্রবাহ বইতে পারে । মধ্য-ভিক্টোরীয় যুগ বাস্তবকে সম্মান ক'রে তাকে শ্রদ্ধেয়রূপেই অমুভব করতে চেয়েছিল, এ যুগ বাস্তবকে অবমানিত ক’রে সমস্ত আক্ৰ ঘুচিয়ে দেওয়াকেই সাধনার বিষয় ব’লে মনে করে । বিশ্ববিষয়ের প্রতি অতিমাত্র শ্রদ্ধাকে যদি বলে সেটিমেণ্টালিজম, তার প্রতি গায়েপড়া বিরুদ্ধতাকেও সেই একই নাম দেওয়া যেতে পারে। যে কারণেই হোক, মন এমন বিগড়ে গেলে দৃষ্টি সহজ হয় না। অতএব মধ্যে-ভিক্টোরীয় যুগকে যদি আতভদ্রয়ানার পাও বলে ব্যঙ্গ কর তবে এডোয়ার্ডি যুগকেও ব্যঙ্গ করতে হয় উলটো বিশেষণ দিয়ে। ব্যাপারখানা স্বাভাবিক নয় অতএব শাশ্বত নয়। সায়ান্সেই বল আর আর্টেই বল, নিরাসক্ত মনই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বাহন ; যুরোপ সায়ান্সে সেটা পেয়েছে কিন্তু সাহিত্যে পায় নি । \రిచినా সাহিত্যতত্ত্ব আমি আছি এবং আর-সমস্ত আছে, আমার অস্তিত্বের মধ্যে এই যুগল-মিলন। আমার বাইরে কিছুই যদি অনুভব না করি তবে নিজেকেও অনুভব করি নে। বাইরের অনুভূতি যত প্রবল হয় অস্তরের সত্তাবোধও তত জোর পায়। আমি আছি, এই সত্যটি আমার কাছে চরম মূল্যবান। সেইজন্ত যাতে আমার সেই বোধকে বাড়িয়ে তোলে তাতে আমার আনন্দ । বাইরের যে-কোনো জিনিসের পরে আমি উদাসীন থাকতে পারি নে, যাতে আমার ঔৎসুক্য অর্থাৎ বা আমার চেতনাকে জাগিয়ে রাখে, সে যতই তুচ্ছ হোক তাতেই মন হয় খুশি – তা সে হোক-না ঘুড়ি-ওড়ানো, হোক-না লাটিম-ঘোরানো। কেননা, সেই আগ্রহের আঘাতে আপনাকেই অত্যস্ত অনুভব করি । আমি আছি এক, বাইরে অাছে বহু। এই বহু আমার চেতনাকে বিচিত্ৰ ক’রে তুলছে, আপনাকে নানা কিছুর মধ্যে জানছি নানা ভাবে । এই বৈচিত্র্যের দ্বারা আমার আত্মবোধ সর্বদা উৎসুক হয়ে থাকে। বাইরের অবস্থা একঘেয়ে হলে মানুষকে মন-মরা করে।