পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وا مbجت অনেকক্ষণ ভেবেছিল, এর গলার সুরে যে-একটি স্বাদ আছে, স্পর্শ আছে তাকে বর্ণনা করা যায় কী করে। নোটবইখানা খুলে লিখলে, “এ যেন অম্বুরি তামাকের হালকা ধোয়, জলের ভিতর দিয়ে পাক খেয়ে আসছে,—নিকোটিনের বীজ নেই, আছে গোলাপজলের স্নিগ্ধ গন্ধ ।” (s মেয়েটি নিজের ক্রটি ব্যাখ্যা করে বললে, “একজন বন্ধু আসার খবর পেয়ে খুঁজতে বেরিয়েছিলুম। এই রাস্তায় খানিকটা উঠতেই শোফার বলেছিল এ রাস্ত হতে পারে না । তখন শেষ পর্যন্ত না গিয়ে ফেরবার উপায় ছিল না । তাই উপরে চলেছিলেম । এমন সময় উপরওআলার ধাক্কা খেতে হল ।” 劇 অমিত বললে, “উপরওআলার উপরেও উপরওআলা আছে—একটা অতি কুত্ৰ কুটিল গ্রহ, এ তারই কুকীর্তি।” অপর পক্ষের ড্রাইভার জানালে, “লোকসান বেশি হয় নি, কিন্তু গাড়ি সেরে নিতে দেরি হবে ।” অমিত বললে, “আমার অপরাধী গাড়িটাকে যদি ক্ষমা করেন, তবে আপনি যে পানে অল্পমতি করবেন সেইখানেই পৌছিয়ে দিতে পারি।” “দরকার হবে না, পাহাড়ে হেঁটে চলা আমার অভ্যেস ।” “দরকার আমারই, মাপ করলেন তার প্রমাণ ।” মেয়েটি ঈষং দ্বিধায় নীরব রইল। অমিত বললে, “আমার তরফে আর ৎ একটু কথা আছে। গাড়ি হাকাই,—বিশেষ একটা মহং কর্ম নয়—এ-গাড়ি চালিয়ে পস্টারিটি পর্যন্ত পৌছোবার পথ নেই। তবু আরম্ভে এই একটিমাত্র পরিচয়ই পেয়েছেন। অথচ এমনি কপাল, সেটুকুর মধ্যেও গলদ উপসংহারে এটুকু দেপাতে দিন যে, জগতে অন্তত আপনার শোফারের চেয়ে আমি অযোগ্য নই।” অপরিচিতের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে অজানা বিপদের আশঙ্কায় মেয়ের সংকোচ সরাতে চায় না । কিন্তু বিপদের এক ধাক্কায় উপক্রমণিকার অনেকখানি বিস্তৃত বেড়া একদমে গেল ভেঙে। কোন দৈব নির্জন পাহাড়ের পথে হঠাৎ মাঝখানে দাড় করিয়ে দুজনের মনে দেখাদেখির গাঠ বেঁধে দিলে ; সবুর করলে না। আকস্মিকের বিদ্যুং-আলোতে এমন করে যা চোখে পড়ল, প্রায় মাঝে মাঝে এ যে রাত্রে জেগে উঠে অন্ধকারের পটে দেখা যাবে। চৈতন্যের মাঝখানটাতে তার গভীর ছাপ পড়ে গেল, নীল আকাশের উপরে স্বষ্টির কোন এক প্রচণ্ড ধাক্কায় যেমন স্বৰ্য-নক্ষত্রের আগুন-জলা ছাপ । মুখে কথা না বলে মেয়েট গাড়িতে উঠে বসল। তার নির্দেশমতো গাড়ি পৌঁছোল