পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>b" রবীন্দ্র-রচনাবলী “কর্তামা, ওঁর যেটা স্বভাব তার উপর আমি একটুও অত্যাচার করতে চাই নে ৷” “আমি তে এই জানি, লাবণ্য, ভালোবাসা খানিকট অত্যাচার চায়, অত্যাচার করে ও ” “কর্তামা, সে-অত্যাচারের ক্ষেত্র আছে ; কিন্তু স্বভাবের উপর পীড়ন সয়ন সাহিত্যে ভালোবাসার বই যতই পড়লেম ততই এই কথাটা বার বার আমার মনে হয়েছে ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানেই যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মাতুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি, নিজের ইচ্ছেকে অন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে ষেপানে জুলুম, যেপানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলিয়ে অন্যকে স্মৃষ্টি করব ।” “ত, মা, দুজনকে নিয়ে সংসার পাততে গেলে পরস্পর পরস্পরকে পানিকট স্বষ্টি না করে নিলে চলেই না । ভালোবাস। যেখানে আছে সেপানে সেই স্বষ্টি সহজ,—যেপানে নেই সেপানে হাতুড়ি পিটোতে গিয়ে, তুমি যাকে ট্রাজেডি বল, তাই ঘটে।" “সংসার পাতবার জন্যেই যে-মানুষ তৈরি, তার কথা ছেড়ে দাও । সে তো মাটির মানুষ, সংসারের প্রতিদিনের চাপেই তার গড়নপিটোন আপনিই ঘটতে থাকে । কিন্তু যে-মানুষ মাটির মানুষ একেবারেই নয়, সে আপনার স্বাতন্ত্র কিছুতেই ছাড়তে পারে না ! যে-মেয়ে তা না বোঝে সে যতই দাবি করে ততই হয় বঞ্চিত, যে-পুরুষ তা না বোঝে সে যতই টানাহেঁচড়া করে ততই আসল মাতুষটাকে হারায় । আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ স্থলেই আমরা যাকে পাওয়া বলি সে, আর কিছু নয়, হাতকড়া হাতকে যে-রকম পায় সেই আর কি ” “তুমি কী করতে চাও, লাবণ্য ?" “বিয়ে করে দুঃখ দিতে চাই নে । বিয়ে সকলের জন্যে নয়। জান, কর্ত্যম খুতখুতে মন যাদের, তারা মানুষকে পানিক-পানিক বাদ দিয়ে দিয়ে বেছে বেছে নেয়। কিন্তু বিয়ের ফদে জড়িয়ে পড়ে স্ত্রীপুরুষ যে বড়ে বেশি কাছাকাছি এসে পড়ে—-মাঝে ফাক থাকে না, তপন একেবারে গোট মানুষকে নিয়েই কারবার করতে হয়, নিতান্থ নিকটে থেকে । কোনো একটা অংশ ঢাকা রাপবার জে৷ পাকে না ।" “লাবণ্য, তুমি নিজেকে জান না। তোমাকে নিতে গেলে কিছুই বাদ দিয়ে নেবার দরকার হবে না ।” “কিন্তু উনি তো আমাকে চান না । যে-আমি সাধারণ মানুষ, ঘরের মেয়ে, তাকে উনি দেপতে পেয়েছেন বলে মনেই করি নে। আমি যেই ওঁর মনকে স্পর্শ করেছি আমনি ওঁর মন অবিরাম ও অজস্ৰ কথা কয়ে উঠেছে। সেই কথা দিয়ে উনি কেবলই আমাকে গড়ে তুলেছেন । ওঁর মন যদি ক্লাস্থ হয়, কথা যদি ফুরোয়, তবে সেই নিঃশব্দের ভিতরে