পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$. అు• রবীন্দ্র-রচনাবলী অমিত একটুখানি চুপ করে থেকে বললে, “লাবণ্য কি এ খবর জেনেছে ?" "ন, আমি তাকে লিখি নি। তোমার মুখে পাকা খবর পাই নি বলে চুপ করে আছি।” “খবরটা সত্যি, কিন্তু লাবণ্য হয়তে বা ভুল বুঝবে।” যতী হেসে বললে, “এর মধ্যে ভুল বোঝবার জায়গা কোথায় ? বিয়ে কর যদি তো বিয়েই করবে, সোজা কথা ।” “দেখো, যতী, মানুষের কোনো কথাটাই সোজা নয়। আমরা ডিকশনারিতে ষে-কথার এক মানে বেঁধে দিই মানবজীবনের মধ্যে মানেট সাতখানা হয়ে ধায় সমুদ্রের কাছে এসে গঙ্গার মতো।” যতী বললে, “অর্থাং তুমি বলছ বিবাহ মানে বিবাহ নয়।” “আমি বলছি, বিবাহের হাজারখানা মানে—মানুষের সঙ্গে মিশে তার মানে হয়, মানুষকে বাদ দিয়ে তার মানে বের করতে গেলেই ধাধা লাগে।” “তোমার বিশেষ মানেটাই বলে না ।” “সংজ্ঞা দিয়ে বলা যায় না, জীবন দিয়ে বলতে হয়। যদি বলি ওর মূল মানেট ভালোবাসা, তাহলেও আর-একটা কথায় গিয়ে পড়ব, ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে আরও বেশি জ্যান্ত ।” “তাহলে অমিতদা, কথা বন্ধ করতে হয় যে কথা কাধে নিয়ে মানের পিছন পিছন ছুটব আর মানেট বায়ে তাড়া করলে ভাইনে, আর ডাইনে তাড়া করলে বায়ে মারবে দৌড় এমন হলে তে কাজ চলে না।” “ভায়া, মন্দ বল নি। আমার সঙ্গে থেকে তোমার মুখ ফুটেছে । সংসারে কোনোমতে কাজ চালাতেই হবে, তাই কথার নেহাত দরকার যে-সব সত্যকে কথার মধ্যে কুলোয় না ব্যবহারের হাটে তাদেরই ছাটি, কথাটাকেই জাহির করি ; উপায় কী ? তাতে বোঝাপড়াটা ঠিক না হ’ক চোখ বুজে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।” “তবে কি আজকের কথাটাকে একেরারেই খতম করতে হবে ?” rá k “এই আলোচনাটা যদি নিতান্তই জ্ঞানের গরজে হয়, প্রাণের গরজে না হয় তাহলে খতম করতে দোষ নেই।” “ধরে নাও না প্রাণের গরজেই ।” “শাবাশ, তবে শোনো ।” এইখানে একটু পাদটীকা লাগালে দোষ নেই। অমিতর ছোটো বোন লিসির স্বহস্তে ঢালা চা যতী আজকাল মাঝে মাঝে প্রায়ই পান করে আসছে। অনুমান করা যেতে