পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిyషా রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু তাহার পর যখন যথেষ্ট কৃতজ্ঞতার শস্ত উৎপন্ন হয় না তখন কি কেবলই মাটির দোষ দিবে ? এ নিয়ম কি বিশ্বব্যাপী নহে যে, হৃদয়ের সহিত কাজ না করিলে হৃদয়ে তাহার ফল ফলে না ? & আমাদের দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের অনেকেই ইংরেজরুত উপকার যে উপকার নহে ইহাই প্রাণপণে প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিতেছে। হৃদয়শূন্ত উপকার গ্রহণ করিয়া তাহারা মনের মধ্যে কিছুতেই আত্মপ্রসাদ অনুভব করিতে পারিতেছে না। কোনোক্রমে তাহারা কৃতজ্ঞতার দায় হইতে আপনাকে যেন মুক্ত করিতে চাহে। সেইজন্য আজকাল আমাদের কাগজে পত্রে কথায় বার্তায় ইংরেজ সম্বন্ধে নানাপ্রকার কুতর্ক দেখা যায়। এক কথায়, ইংরেজ নিজেকে আমাদের পক্ষে আবস্তক করিয়া তুলিয়াছে কিন্তু প্রিয় করিয়া তোলা আবশ্যক বোধ করে নাই ; পথ্য দেয়, কিন্তু তাহার মধ্যে স্বাদ সঞ্চার কেরিয়া দেয় না, অবশেষে যখন বমনোত্রেক হয় তখন চোখ রাঙাইয়া হুহুংকার দিয়া উঠে। আজকালকার অধিকাংশ আন্দোলন গৃঢ় মনঃক্ষোভ হইতে উৎপন্ন। এখন প্রত্যেক কথাটাই দুই পক্ষের হারজিতের কথা হইয়া দাড়ায়। হয়তো যেখানে পাচটা নরম কথা বলিলে উপকার হয় সেখানে আমরা তীব্রভাষায় অগ্নিস্ফূলিঙ্গ ছড়াইতে থাকি, এবং যেখানে একটা অনুরোধ পালন করিলে বিশেষ ক্ষতি নাই সেপানেও অপর পক্ষ বিমুখ হইয়া থাকে। কিন্তু বৃহৎ অসুষ্ঠানমাত্রেই আপস ব্যতীত কাজ চলে না । পঞ্চবিংশতি কোটি প্রজাকে সুশৃঙ্খলায় শাসন করা সহজ ব্যাপার নহে। এতবড়ে বৃহৎ রাজশক্তির সহিত যখন কারবার করিতে হয় তখন সংযম, অভিজ্ঞতা এবং বিবেচনার আবশ্যক। এইটে জানা চাই গবর্মেন্ট ইচ্ছা করিলেই একটা কিছু করিতে পারে না ; সে আপনার বৃহত্ত্বে অভিভূত, জটিলতায় আবদ্ধ। তাহাকে একটুখানি নড়িতে হইলেই অনেক দূর হইতে অনেকগুলা কল চালনা করিতে হয় । আমাদের এখানে আবার অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান এবং ভারতবর্ষীয় এই দুই অত্যন্ত বিসদৃশ সম্প্রদায় লইয়া কারবার। উভয়ের স্বাৰ্থ অনেক স্থলেই বিরোধী। রাজ্যতন্ত্রের যে চালক সে এই দুই বিপরীত শক্তির কোনোটাকেই উপেক্ষা করিতে পারে না—যে করিতে চায় সে নিস্ফল হয়। আমরা যখন আমাদের মনের মতো কোনো একটা প্রস্তাব করি তখন মনে করি, গবমেন্টের পক্ষে অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানের বাধাটা যেন বাধাই নহে। অথচ প্রকৃতপক্ষে শক্তি তাহারই বেশি। প্রবল শক্তিকে অবহেলা করিলে কিরূপ সংকটে পড়িতে হয় ইলবার্ট বিলের বিপ্লবে তাহার পরিচয় পাওয়া গেছে। সৎপথে এবং ন্যায়পথেও রেলগাড়ি চালাইতে হইলে আগে যথোচিত উপায়ে মাটি সমতল