পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रांछ aछ الإصراني এই কাটগাছগুলির মূল যখন মনের মধ্যে তখন ইহাকে উৎপাটন করিতে হইলে সেই মনের মধ্যে প্রবেশ করিতে হুইবে । কিন্তু পাকা রাস্তা ও কাচা রাস্ত যোগে ইংরেজরাজের আর সর্বত্রই গতিবিধি আছে কেবল দুর্ভাগ্যক্রমে সেই মনের মধ্যেই নাই। হয়তে সে-জায়গাটাতে প্রবেশ করিতে হইলে ঈষৎ একটুখানি মাথা হেলাইয়া ঢুকিতে হয়, কিন্তু ইংরেজের মেরুদণ্ড কোনোখানেই বাকিতে চায় না। অগত্যা ইংরেজ আপনাকে এইরূপ বুঝাইতে চেষ্টা করে যে, এই যে খবরের কাগজে কটুকথা বলিতেছে, সভা হইতেছে, রাজ্যতন্ত্রের অপ্রিয় সমালোচনা চলিতেছে ইহার সহিত “পীপলের" কোনো যোগ নাই –এ কেবল কতকগুলি শিক্ষিত পুতুলনাচওআলার বুজরুগিমাত্র। বলে যে, ভিতরে সমস্তই আছে ভালো ; বাহিরে যে একটু-আধটু বিকৃতির চিহ্ন দেখা যাইতেছে সে চতুর লোকে রং করিয়া দিয়াছে। তবে তো আর ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিবার আবগুক নাই ; কেবল ষে-চতুর লোকটাকে সন্দেহ করা যায় তাহাকে শাসন করিয়া দিলেই চুকিয়া যায়। ওইটেই ইংরেজের দোষ । সে কিছুতেই ঘরে আসিতে চায় না। কিন্তু দূর হইতে, বাহির হইতে, কোনোক্রমে স্পর্শসংস্রব বাচাইয়া মানুষের সহিত কারবার করা ষায় না –যে-পরিমাণে দূরে থাকা যায় সেই পরিমাণেই নিফলতা প্রাপ্ত হইতে হয় । মানুষ তো জড়যন্ত্র নহে যে, তাহাকে বাহির হইতে চিনিয়া লওয়া যাইবে ; এমন কি পতিত ভারতবর্ষেরও একটা হৃদয় আছে এবং সে-হৃদয়ট সে তাহার জামার আস্তিনে ঝুলাইয়া রাখে নাই । জড়পদার্থকেও বিজ্ঞানের সাহায্যে নিগৃঢ়ৰূপে চিনিয়া লইতে হয় তবেই জড়প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব বিস্তার করিতে পারা যায়। মচুন্যলোকে যাহারা স্থায়ী প্রভাব রক্ষা করিতে চাহে তাহাদের অস্তান্ত অনেক গুণের মধ্যে অন্তরঙ্গরূপে মানুষ চিনিবার বিশেষ গুণটি থাকা আবশ্বক। মানুষের অত্যন্ত কাছে যাইবার যে ক্ষমতা সে একটা দুর্লভ ক্ষমতা। ইংরেজের বিস্তর ক্ষমতা আছে কিন্তু সেইটি নাই। সে বরঞ্চ উপকার করিতে অসন্মত নহে কিন্তু কিছুতেই কাছে আসিতে চাহে না । কোনোমতে উপকারটা সারিয়া ফেলিয়া আমনি তাড়াতাড়ি সরিতে পারিলে বঁাচে । তাহার পরে সে ক্লবে গিয়া পেগ খাইয়া বিলিয়ার্ড খেলিয়া অনুগ্রহীতদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক বিশেষণ প্রয়োগপূর্বক তাহাদের বিজাতীয় অস্তিত্ব শরীরমনের নিকট হইতে যথাসাধ্য দূরীকৃত করিয়া রাখে। ইহারা দয়া করে না উপকার করে, স্নেহ করে না রক্ষা করে, শ্রদ্ধা করে না অথচ স্বায়াচরণের চেষ্টা করে ; ভূমিতে জল সেচন করে না, অথচ রাশি রাশি বীজ বপন করিতে কার্পণ্য নাই। I o