পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 8`ම් অন্য ম্যাজিস্ট্রেট অপেক্ষা অধিকতর ন্যায়পর, এবং তিনি সাক্ষ্যের সত্যমিথ্যা সম্পূর্ণ নিঃসংশয় স্থঙ্করূপে নির্ণয় না করিয়া আসামিকে দণ্ড দিতে কুষ্ঠিত, অতএব এই সচেতন ধর্মবুদ্ধি এবং সতর্ক স্তায়পরতার জন্য সত্বর তাহার পদবৃদ্ধি করিয়া দেওয়া কর্তব্য ; অথবা যদি দেখিতে পান যে, কোনো পুলিস-কর্মচারীর এলাকায় অপরাধের সংখ্যার তুলনায় অল্পসংখ্যক অপরাধী ধরা পড়িতেছে অথবা চালান আসামি বহুলসংখ্যায় খালাস পাইতেছে তপন তাহারা এমন তর্ক করেন না যে, সম্ভবত এই পুলিস-কর্মচারী অন্ত পুলিস-কর্মচারী অপেক্ষ সংপ্রকৃতির—ইনি সাধু লোককে চোর বলিয়া চালান দেন না এবং মিথ্যাসাক্ষ্য স্বহস্তে স্বজন করিয়া অভিযোগের ছিদ্ৰসকল সংশোধন করিয়া লন না, অতএব পুরস্কার স্বরূপে অচিরাং উহার গ্রেড বুদ্ধি করিয়া দেওয়া কর্তব্য । আমরা যে দুই আল্পমানিক দৃষ্টাস্তের উল্লেখ করিলাম উভয়তই সম্ভবপরতা ন্যায় ও ধর্মের দিকেই অধিক । কিন্তু কাহারও অবিদিত নাই গবর্মেন্টের হস্তে উক্তবিধ হতভাগ্য সাধুদিগের সম্মান এবং উন্নতি লাভ হয় না । জনসাধারণও গবর্মেন্টের অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্মবুদ্ধি নহে, সেও খুব মোটামুটি রকমের বিচার করে। সে বলে আমি অত আইনকান্তন সাক্ষীসাবুদ বুঝি না, কিন্তু ভারতবর্ষীয়কে হাতা করিয়া একটা ইংরেজও উপযুক্ত দণ্ডার্হ হয় না এ কেমন কথা । ল৷রংলার আঘাতে প্রজাসাধারণের হৃদয়ে যদি একটা সাংঘাতিক ক্ষত উৎপন্ন হইতে থাকে তবে তাহ গোপনে আচ্ছন্ন করিয়া রাপা রাজভক্তি নহে। তাই ব্যাবু-অভিহিত অস্মংপক্ষায়ের এ-সকল কথা প্রকাশ করিয়া বলাই কর্তব্য জ্ঞান করে। আমরা ভারতরাজ্য-পরিচালক বাষ্পষন্ধের “বয়লার”স্থিত তাপমান মাত্র, আমাদের নিজের কোনো শক্তি নাই, ছোটে বড়ে বিচিত্র লৌহচক্রচালনার কোনো ক্ষমতাই রাখি না, কেবল বৈজ্ঞানিক নিগৃঢ় নিয়মানুসারে সময়ে সময়ে আমাদের চঞ্চল পারদবিন্দু হঠাৎ উপরের দিকে চড়িয়া যায়, কিন্তু এঞ্জিনিয়ার সাহেবের তাহাতে রাগ করা কর্তব্য নহে। তিনি একটি ঘুষি মারিলেই এই ক্ষুদ্র ক্ষণভঙ্গুর পদার্থটি ভাঙিয়া তাহার সমস্ত পারদটুকু নাস্তিনভূত হইয়া যাইতে পারে—কিন্তু বয়লার গত উত্তাপের পরিমাণ নির্ণয় করা যন্ত্রচালনকার্যের একটা প্রধান অঙ্গ। ইংরেজ অনেক সময় বিপরীত উগ্ৰমূর্তি ধারণ করিয়া বলে--প্রজাসাধারণের নাম করিয়া আত্মপরিচয় দিতেছ, তোমরা কে । তোমরা তো আমাদেরই স্কুলের গুটিকয়েক বাক্যবিশারদ ইংরেজিনবিশ । প্রত্ন, আমরা কেহই নহি । কিন্তু তোমাদের বিদ্রুপ বিরক্তি এবং ক্ৰোধদহনের দ্বারা অষ্টমান করিতেছি তোমরা আমাদিগকে নিতান্তই সামান্ত বলিয়া জ্ঞান কর না । এবং সামান্ত জ্ঞান করা কর্তব্যও নহে। সংখ্যায় সামান্ত হইলেও এই বিচ্ছিন্নসমাজ