পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{} পরিশিষ্ট &q} এরূপ কুটুম্বিত যখন স্বাভাবিক তখন ইহার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিবার জে৷ নাই। আমরা কেবল, সরকারি ও বেসরকারি ইংরেজ কেমন করিয়া একাকার হইয়া আসিতেছে তাহার কারণ নির্ণয় করিতেছি মাত্র। * এখন, যে-কোনো বিধান বা রাজনীতি ভারতবর্ষীয় ইংরেজ-সাধারণের অপ্রিয় তাহাতে হাত দিতে গেলেই সামাজিক চক্ষুলজাট অত্যন্ত অধিক হইয় উঠে। টেনিস-কোর্ট, নৃত্যশালা, শিকার-পার্ট, রঙ্গমঞ্চ, সংগীতসতায় স্বসম্প্রদায়ের মতামতকে সর্বদা ঠেলিয়া চলা অসামান্ত বলশালী লোকের কর্ম। তর্কদ্বন্ধে বা কর্মক্ষেত্রে মতবিরোধ অনেক সময় স্বমতরক্ষার উত্তেজনাস্বরূপ হয়,—কিন্তু খেলায় আমোদে আহারে বিহারে নারীকণ্ঠে বা স্ত্রীকটাক্ষে অমুক্ত এবং অধোক্ত মতামতগুলি অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। তা ছাড়া যে শাসনকর্তা রাজেচিত ঔদার্ধের সহিত আমাদের কথায় কর্ণপাত করিতে নারাজ না হন, ইংরেজ-মহলে তাহার প্রতি একটা অত্যন্ত কঠিন অপবাদ প্রচার হয় । বলে যে, তিনি ভারতবর্ষীয় আন্দোলনকারীদের দ্বারা চালিত হইতেছেন। ইংরেজের পক্ষে এমন দুর্বলতা আর কী হইতে পারে। কিন্তু অপবাদকারীরা এ-কথা ভুলিয়া যায় যে, দুর্বলের কথায় কান দেওয়া দুর্বলতার ঠিক বিপরীত। তাহাই সবলের লক্ষণ। আজকাল শাসনকর্তাদের পক্ষে শক্ত হইয়াছে ইংরেজ-সমাজের দ্বারা চালিত না হওয়া ; তাহাই তাহাদের পক্ষে দুর্বলতা। পাছে এমন কথা উঠে যে, কনগ্রেসের দলবদ্ধ কাতরতার ভূলিল, সেই মনে করিয়া কোনো উদারনীতি প্রবর্তনে দ্বিধা বোধ করা ইহাই দুর্বলতা ; ইংরেজ পত্রসম্পাদকের সহিত রাজসিংহাসন ভাগাভাগি করিয়া লওয়া, ইহাই দুর্বলতা। এখনকার ভারতশাসনব্যাপার ভারতবর্ষীয় ইংরেজের সামাজিকতাজালে আপাদমস্তক জড়িত এবং সেইজন্যই দুর্বল। সেইজন্ত প্রেমনীতি-ক্ষমানীতির উপরে ভারতসাম্রাজ্যকে স্থায়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা যে কেবল রহিত হইতেছে তাহা নহে তাহ প্রকাপ্তভাবে উপেক্ষিত অবজ্ঞাত উপহলিত হইতেছে। সর্বপ্রকার বিচারবিবেকবিধান লঙ্ঘন করিয়া আকস্মিক জবরদস্তি দ্বারা দুঃখিত প্রজাদিগকে স্তম্ভিত করিয়া দেওয়াই প্রবলের ধর্ম এবং ক্ষমা, ধৈৰ্ব, অবিচলিত অপক্ষপাত, অথবা দুর্বলের প্রতি প্রজার প্রতি নিরূপায়ের প্রতি পক্ষপাত দুর্বলের লক্ষণ বলিয়া প্রতিদিন কীর্তিত হইতেছে। b\లిed