পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী o প্রকাশ করিয়া ফেলে। সেদিন বাঙালি নিজেকে যেরূপে ব্যক্ত করিয়াছে, তাহাতে আমাদের লজ্জার কোনো কারণ ঘটে নাই । আপনারা সকলেই জানেন, সেদিন সভাপতিকে লইয়া যখন প্রতিনিধি ও সভাসদগণ মন্ত্রণাসভার পথে যাত্রা করিয়াছিলেন, তখন নায়কবর্গের আদেশ অনুসারে যাত্রিগণ কেহ একটি যাইও গ্রহণ করেন নাই। এবং পুলিস যখন নিরস্ত্র-তাহাদের উপর পড়িয়া আঘাতবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিল, তখনও নায়কদের উপদেশ স্মরণ করিয়া উহার দৃঢ়তার সহিত সমস্ত সন্থ করিয়াছেন। ; আমি জানি, এ-সম্বন্ধে অবিচারের আশঙ্কা আছে । “তেজৰিগুৰলিপ্তত মুখরভ বক্তব্যশক্তি: স্থিৱে” তেজস্বিতাকে অহংকার, বাগিতাকে মুখরতা এবং স্থৈৰ্যকে অশক্তি বলিয়া নিন্দুকে নিন্দ করে । সময়বিশেষে স্থৈর্য অশক্তির লক্ষণরূপে প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু যখন তাহা বাঁধ হইতে প্রস্থত হয়, তখন তাহা বীবের শ্রেষ্ঠলক্ষণ বলিয়াই গণ্য হয়। বরিশালে কর্তৃপক্ষ অসংযমের দ্বারা হাস্তকর কাপুরুষতা এবং আমরা স্থৈধের দ্বারা শক্তির গাম্ভীর্ষ প্রকাশ করিয়াছি, এ-বিষয়ে সন্দেহ নাই । এই যে সাময়িক উৎপাতের দ্বারা আত্মবিশ্বত না হইয়া সাধারণের মঙ্গলের উদ্দেশে আমরা উদ্বেল প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ শাসনে রাখিয়াছিলাম, ইহার দ্বারাই আশান্বিত হইয়া উত্তেজনাশাস্তির পূবেই অদ্যকার সভায় আমি দুই-একটি কথা বলিতে প্রবৃত্ত হইলাম । দেশের হিতসাধন একটা বুহুং মঙ্গলের ব্যাপার, নিজের প্রবৃত্তির উপস্থিত চরিতার্থতাসাধন তাহার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। যদি এই বৃহৎ লক্ষ্যটাকে আমাদের হৃদয়ের সন্মুখে যথার্থভাবে ধরিয়া রাপিতে পারি, তবে ক্ষণিক উত্তেজনা, ক্ষুদ্র অস্তদাহ আমাদিগকে পথভ্রষ্ট করিতে পারে না । “বয়কট”-আন্দোলন সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ এই প্রবন্ধে বলেন :

  • আপনাদের কাছে আমি স্পষ্টই স্বীকার করিতেছি, বাঙালীর মুখে“বয়কট” শব্দের আস্ফালনে আমি বারংবার মাথা হেঁট করিয়াছি । আমাদের পক্ষে এমন সংকোচজনক কথা আর নাই। বয়কট দুর্বলের প্রয়াস নহে, ইহা ছুৰ্বলের কলহ । আমরা নিজের মঙ্গলসাধনের উপলক্ষ্যে নিজের ভালো করিলাম না, আজ পরের মন করিবার উৎসাহেই নিজের ভালো করিতে বসিয়াছি, এ-কথা মুখে উচ্চারণ করিবার নহে। আমি অনেক বক্তাকে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে শুনিয়াছি —“আমরা য়ুনিভর্সিটিকে বয়কট করিব।” কেন করিব ? য়ুনিভর্সিটি যদি ভালো জিনিস