পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী O هو مهنا অমনি আমরা বিম্বিত ও উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠি এবং তৎক্ষণাং প্রমাণ করিয়া করিয়া দিই যে, পরের ধৈর্ষের প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করিয়াই আমরা পরকে উদ্বেজিত করিতেছিলাম। আমাদের স্পর্ধ যদি যথার্থ আমাদেরই শক্তি হইতে উদ্ভূত হইত, তবে অপরপক্ষের স্বাভাবিক রোষ এবং শাসনের কাঠিন্ত আমরা স্বীকার করিয়া লইতাম, তবে উদ্যতমুষ্টি দেখিবামাত্র তৎক্ষণাৎ আমরা মিন্টো-মর্লির দোহাই পাড়িতে ও আদালতের আবদার কাড়িতে ছুটিতাম না । এ-কথা মানিতেই হয় যে, স্বভাবের নিয়মে স্পর্ধার বিরুদ্ধে ক্রোধ উৎপন্ন• হইয়া থাকে এবং সক্ষমের ক্রোধ কোনো-না-কোনো উপায়ে হিংসার আকার ধারণ করে। যদি আমরা ইংরেজকে বলি, “তোমাকে জব্দ করিবার জন্যই আমরা দেশের ভালো করিতেছি” এবং তার পরে ইংরেজ রক্তচক্ষু হইবামাত্র বলি, “বাঃ, আমরা দেশের ভালো করিতেছি, তোমরা রাগ করিতেছ কেন", তবে গাষ্ঠীর্ষরক্ষা করা কঠিন হয় । জদ করিতে পারার একটা সুখ আছে, সন্দেহ নাই—কিন্তু দেশের ভালো করিতে পারার মুখ যদি তাহার চেয়ে বড়ো হয়, তবে তাহারই খাতির রাপিতে হয়। আমরা বয়কট করিয়াই দেশী কাপড় চালাইতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, এ-কথা বলিবামাত্র দেশী কাপড় চালানো বিঘ্নসংকুল হইয় উঠে, মুতরাং জৰা করিবার সুখ ভোগ করিতে গিয়া ভালো করিবার সুখ গর্ব করিতে হয় । দেশী কাপড় চালানো ইংরেজের বিরুদ্ধে আমাদের একটা লড়াই, এ-কথা বলিলেই যাহা আমাদের চিরন্তন মঙ্গলের পবিত্র ব্যাপার, তাহাকে মল্লবেশ পরাইয়া পোলিটিকাল আখড়ায় টানিয়া আনিতে হয় ; ইংরেজ তখন এই উদযোগকে কেবল ষে নিজের দেশের তাতির লোকসান বলিয়া দেগে, তাহ নয়, এই হারজিতের ব্যাপারকে একটা পোলিটিকাল সংগ্রাম বলিয়া গণ্য করে। ইহাতে ফল হয় এই ষে, নিজের দুর্বল প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিবার উদ্দেশে আমরা স্বদেশের হিতকে ইচ্ছাপূর্বক বিপদের মুখে ফেলিয়া দিই। আমাদের দেশে তো অন্তরে-বাহিরে, নিজের চরিত্রে ও পরের প্রতিকূলতায় বিঘ্ন ভূরিস্কৃরি আছে, তাহার পরে আস্ফালন করিয়া নূতন বিয়কে হাক দিয়া ভাকিয়া আনিব, এতবড়ে অনাবস্তক শক্তিক্ষয়ের উপযুক্ত সঞ্চয় যে আমাদের কোথায় আছে, তাহার সন্ধান তো আমি জানি না । বড়ো-বড়ো স্বাধীনজাতিকেও বিবেচনা করিয়া চলিতে হয়, তন্ধ হইয়া থাকিতে হয়। স্বজাতির মঙ্গলসম্বন্ধে যাহাদের দায়িত্বৰোধ আছে, তাছার তেজস্ব হইলেও অনেক লাজুলমর্দন বিনম্রফণায় নিঃশব্দে স্বীকার করে—ইংলণ্ড