পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S OV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎচষ্ণুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার বড়, সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ, তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু ক’রে হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে । হাওয়ার মুখে ছুটিল ভাঙা কুঁড়ের চাল শিকল-ছোড়া কয়োদি-ডাকাতের মতো । আবার ফান্ধৱনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিনে হাওয়া ছড়িয়ে দিয়েছে বিরাহমিলনের স্বাগতপ্ৰলাপ আশ্রমুকুলের গন্ধে । চাদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে। স্বগীয় মদের ফেনা । বনের মর্মরধবনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে। অকস্মাৎ কৰোলোচ্ছাসে । সিন্ধ তুমি, হিংস্ৰ তুমি, পুরাতনী, তুমি নিত্যনবীনা, অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞহুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে ংখ্যাগণনার অতীত প্ৰত্যুষে, তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছ শতশত ভাঙা ইতিহাসের অর্থলুপ্ত অবশেষবিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে । জীবপালিনী, আমাদের পুষেছি তোমার খণ্ডকালের ছোটো ছোটো পিজারে । তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান । আজ আমি কোনো মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে, এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গোথেছি বসে বসে তার জন্যে অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে । তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূৰ্যপ্ৰদক্ষিণের পথে যে বিপুল নিমেষগুলি উমীলিত নিমীলিত হতে থাকে তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোনো একটি আসনের সত্যমূল্য যদি দিয়ে থাকি, আজীবনের কোনো একটি ফািলবান খণ্ডকে যদি জয় করে থাকি পরম দুঃখে৷ তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোটার একটি তিলক আমার কপালে ; সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে । যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে ।