পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাল্গুনী ぬ> বুঝেছি শ্রুতিভূষণ, এর জন্যে আর বৈরাগ্যবারিধির প্রমাণ দরকার নেই। মন্ত্রী, কাঞ্চনপুর জনপদটি যাতে শ্রুতিভূষণের বংশে চিরন্তন— আবার কী, বারবার কেন চীৎকার করছে। চীৎকারটা বারবার করছে বটে কিন্তু কারণটা একই রয়ে গেছে । ওরা সেই মহারাজের দুর্ভিক্ষকাতর প্রজা । মহারাজ, ব্রাহ্মণী মহারাজকে বলতে বলেছেন তিনি তার সর্বাঙ্গে মহারাজের যশোঝংকার ধ্বনিত করতে চান কিন্তু আভরণের অভাববশত শব্দ বড়োই ক্ষীণ হয়ে বাজছে । মন্ত্রী ! 齡 মহারাজ ! ব্রাহ্মণীর আভরণের অভাবমোচন করতে যেন বিলম্ব না হয় । আর মন্ত্রীমশায়কে বলে দিন, আমরা সর্বদাই পরমার্থচিন্তায় রত, বৎসরে বৎসরে গৃহসংস্কারের চিন্তায় মন দিতে হলে চিত্তবিক্ষেপ হয়। অতএব রাজশিল্পী যদি আমার গৃহটি স্থপৃঢ় করে নির্মাণ করে দেয় তা হলে তার তলদেশে শাস্তমনে বৈরাগ্যসাধন করতে পারি। মন্ত্রী, রাজশিল্পীকে যথাবিধি আদেশ করে দাও । মহারাজ, এ বৎসর রাজকোষে ধনাভাব । সে তো প্রতি বৎসরেই শুনে আসছি। মন্ত্রী, তোমাদের উপর ভার ধন বৃদ্ধি করবার, আর আমার উপর ভার অভাব বৃদ্ধি করবার। এই দুইয়ের মিলে সন্ধি করে হয় ধনাভাব । * মহারাজ, মন্ত্রীকে দোষ দিতে পারি নে। উনি দেখছেন আপনার অর্থ, আর আমরা দেখছি আপনার পরমার্থ, সুতরাং উনি যেখানে দেখতে পাচ্ছেন অভাব আমরা সেইখানে দেখতে পাচ্ছি ধন। বৈরাগ্যবারিধিতে লিখছেন– রাজকোষ পূর্ণ হয়ে তৰু শূন্তমাত্র, যোগ্য হাতে যাহা পড়ে লভে সৎপাত্র । পাত্র নাই ধন আছে, থেকেও না থাকা, পাত্র হাতে ধন, সেই রাজকোষ পাকা । আহা হা! আপনাদের সঙ্গ অমূল্য। কিন্তু মহারাজের সঙ্গ কত মূল্যবান, শ্রতিভূষণমশায় তা বেশ জানেন। তা হলে আসুন শ্রুতিভূষণ, বৈরাগ্যসাধনের ফর্দ যা দিলেন সেটা সংগ্রহ করা যাক ।