পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাল্গুনী { >Q এখন তোমার কাজটা কী বলে। তে। কবি । মহারাজ, ওই-যে তোমার দরজার বাইরে কান্ন৷ উঠেছে ওই কান্নার মাঝখান দিয়ে এখন ছুটতে হবে । ওহে কবি, বল কী তুমি । এ-সমস্ত কেজো লোকের কাজ, দুর্ভিক্ষের মধ্যে তোমরা কী করবে। কেজো লোকেরা কাজ বেস্তুরো করে ফেলে, তাই সুর বঁাধবার জন্যে আমাদের ছুটে আসতে হয়। ওহে কবি, আর-একটু স্পষ্ট ভাষায় কথা কও । মহারাজ, ওরা কর্তব্যকে ভালোবাসে ব’লে কাজ করে, আমরা প্রাণকে ভালোবাসি ব’লে কাজ করি— এইজন্যে ওরা আমাদের গাল দেয়, বলে নিষ্কর্ম, আমরা ওদের গাল দিই, বলি নিজীব । কিন্তু জিতটা হল কার । আমাদের, মহারাজ, আমাদের । তার প্রমাণ ? পৃথিবীতে যা-কিছু সকলের বড়ো তার প্রমাণ নেই। পৃথিবীতে যত কবি যত কবিত্ব সমস্ত যদি ধুয়ে-মুছে ফেলতে পার তা হলেই প্রমাণ হবে এতদিন কেজে লোকেরা তাদের কাজের জোরটা কোথা থেকে পাচ্ছিল, তাদের ফসলখেতের মূলের রস জুগিয়ে এসেছে কারা। মহারাজ, আপনার দরজার বাইরে ওই-যে কান্না উঠেছে সে কান্না থামায় কারা। যার বৈরাগ্যবারিধির তলায় ডুব মেরেছে তারা নয়, যারা বিষয়কে অঁাকড়ে ধরে রয়েছে তারা নয়, যার কাজের কৌশলে হাত পাকিয়েছে তারাও নয়, যারা কর্তব্যের শুষ্ক রুদ্রাক্ষের মালা জপছে তারাও নয়, যারা অপর্যাপ্ত প্রাণকে বুকের মধ্যে পেয়েছে ব’লেই জগতের কিছুতে যাদের উপেক্ষা নেই, জয় করে তারা, ত্যাগ করেও তারাই, বঁাচতে জানে তারা, মরতেও জানে তারা, তারা জোরের সঙ্গে দুঃখ পায়, তারা জোরের সঙ্গে দুঃখ দূর করে— স্বষ্টি করে তারাই, কেননা তাদের মন্ত্র আনন্দের মন্ত্র, সব-চেয়ে বড়ো বৈরাগ্যের মন্ত্র । ওহে কবি, তা হলে তুমি আমাকে কী করতে বল । উঠতে বলি মহারাজ, চলতে বলি। ওই-যে কান্না, ও-যে প্রাণের কাছে প্রাণের আহবান । কিছু করতে পারব কি না সে পরের কথা— কিন্তু ডাক শুনে যদি ভিতরে সাড়া না দেয়, প্রাণ যদি না দুলে ওঠে তবে আকর্তব্য হল ব’লে ভাবনা নয়, তবে ভাবনা মরেছি ব'লে।