পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$ન્દ রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেন চিঠিখানা পড়লে দুইবার। পড়ে চুপ করে রইল । নীরজা ব্যাকুলম্বরে বললে, “কিছু একটা বলো ঠাকুরপো ।” রমেন তবু কিছু উত্তর দিলে না। নীরজা তখন বিছানার উপর লুটিয়ে পড়ে বালিশে মাথা ঠুকতে লাগল, বললে, “অন্যায় করেছি, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু কেউ কি তোমরা বুঝতে পার না কিসে অামার মাথা দিল খারাপ করে।” “কী করছ বউদি। শাস্ত হও, তোমার শরীর যে যাবে ভেঙে ।” “এই ভাঙা শরীরই তো আমার কপাল ভেঙেছে, ওর জন্যে মমতা কিসের । তার পরে আমার অবিশ্বাস এ দেখা দিল কোথা থেকে। এ যে অক্ষম জীবন নিয়ে আমার নিজেরই উপরে অবিশ্বাস ! সেই তার নীরু আজ আছে কোথায়, যাকে তিনি কখনো বলতেন ‘মালিনী ’, কখনো বলতেন ‘বনলক্ষ্মী’ ! আজি কে নিলে কেড়ে তার উপবন । আমার কি একটাই নাম ছিল । কাজ সেরে আসতে যেদিন তার দেরি হত আমি বসে থাকতুম তার খাবার আগলে, তখন আমাকে ডেকেছেন ‘অন্নপূর্ণা’। সন্ধ্যাবেলায় তিনি বসতেন দিঘির ঘাটে, ছোটে। রুপোর থালায় বেলফুল রাশ করে তার উপরে পান সাজিয়ে দিতেম তাকে, হেসে আমাকে বলতেন, তাম্বুলকরস্কবাহিনী’ । সেদিন সংসারের সব পরামর্শ ই আমার কাছ থেকে নিয়েছেন তিনি। আমাকে নাম দিয়েছিলেন গৃহসচিব, কখনো-বা ‘হোম সেক্রেটারি’। আমি যেন সমুদ্রে এসেছিলেম ভরা নদী, ছড়িয়েছিলেম নানা শাখা নানা দিকে, সব শাখাতেই আজ একদণ্ডে জল গেল শুকিয়ে, বেরিয়ে পড়ল পাথর ।” “বউদি, আবার তুমি সেরে উঠবে, তোমার আসন আবার অধিকার করবে পূর্ণশক্তি দিয়ে।” “মিছে আশা দিয়ে না ঠাকুরপো । ডাক্তার কী বলে সে আমার কানে আসে। সেইজন্যেই এতদিনের সুখের সংসারকে এত করে আঁকড়ে ধরতে আমার এই নৈরাষ্ঠের কাঙালপন।” “দরকার কী বউদি। আপনাকে এতদিন তো ঢেলে দিয়েছ তোমার সংসারে। তার চেয়ে বড়ো কথা আর কিছু আছে কি। যেমন দিয়েছ তেমনই পেয়েছ, এত পাওয়াই বা কোন মেয়ে পায়। যদি ডাক্তারের কথা সত্যি হয়, যদি যাবার দিন এসেই থাকে, তা হলে যাকে বড়ো করে পেয়েছ, তাকে বড়ো করে ছেড়ে যাও । এতদিন যে-গৌরবে কাটিয়েছ সে-গৌরবকে খাটো করে দিয়ে যাবে কেন । এ বাড়িতে তোমার শেষ স্মৃতিকে যাবার সময় নূতন মহিমা দিয়ে৷ ”