পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ Sసెఫె শুনতে শুনতে যেই একটু ঘুম এসেছে আয় ঘরে এসে বলল, “চিঠি”, ঘোর ভেঙে নীরজা চমকে উঠল। ধড় ধড় করতে লাগল তার বুক । কোনো বন্ধু আদিত্যকে খবর দিয়েছে, জেলে স্থানাভাব, তাই যে-কয়টি কয়েদীকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগেই ছেড়ে দেওয়া হবে সরলা তার মধ্যে একজন। আদিত্যের মনটা লাফিয়ে উঠল । প্রাণপণ বলে চেপে রাখলে মনের উল্লাস । নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “কার চিঠি, কী খবর।” পাছে পড়তে গেলে গলার আওয়াজ যায় কেঁপে, চিঠিখানা দিলে নীরজার হাতেই। নীরজা আদিত্যের মুখের দিকে চাইলে। মুখে কথা নেই বটে কিন্তু কথার প্রয়োজন ছিল না। নীরজার মুথেও কথা বেরল না কিছুক্ষণ । তার পরে খুব জোর করে বললে, “তা হলে তো আর দেরি নেই। আজই আসবে। নিশ্চয়ই ওকে আনবে আমার কাছে।” “ও কী। কী হল। নীরু ! নার্স, ডাক্তার আছেন ?” “আছেন বাইরের ঘরে ।” “এখনই নিয়ে এসো, এই যে ডাক্তার ! এইমাত্র বেশ সহজ শরীরে কথা বলছিল, বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে গেল।” ডাক্তার নাড়ি দেখে চুপ করে রইল । কিছুক্ষণ পরে রোগী চোখ মেলেই বললে, “ডাক্তার, আমাকে বাচাতেই হবে। সরলাকে না দেখে যেতে পারব না, ভালো হবে না তাতে। আশীৰ্বাদ করব তাকে— শেষ আশীর্বাদ ।” আবার এল চোখ বুজে। হাতের মুঠো শক্ত হল, বলে উঠল, “ঠাকুরপো, কথা রাখব, কৃপণের মতো মরব না।” এক-একবার চেতনা ক্ষীণ হয়ে জগৎ ঝাপসা হয়ে আসছে আবার নিকুনিৰু প্রদীপের মতো জীবন-শিখা উঠছে জলে। স্বামীকে থেকে থেকে জিজ্ঞাসা করছে, "কখন আসবে সরলা ।” থেকে থেকে সে ডেকে ওঠে, “রোশনি !” আয় বলে, “কী খোর্থী ।” “ঠাকুরপোকে ডেকে দে এক্ষুনি ।” একবার আপনি বলে উঠল, “কী হবে আমার ঠাকুরপো ! দেব দেব দেব, সব দেব।” রাত্রি তখন নট । নীরজার ঘরের কোণে ক্ষীণ আলোতে জলছে একটা মোমের বাতি। বাতাসে দোলনচাপার গন্ধ । খোলা জানলার থেকে দেখা যায় বাগানের