পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ه ۵ : গাছগুলোর পুঞ্জীভূত কালিম, আর তার উপরের আকাশে কালপুরুষের নক্ষত্ৰশ্রেণী । রোগী ঘুমোচ্ছে আশঙ্কা ক’রে সরলাকে দরজার কাছে রেখে আদিত্য ধীরে ধীরে এল নীরজার বিছানার কাছে । আদিত্য দেখলে ঠোট নড়ছে। যেন নিঃশব্দে কী জপ করছে । জ্ঞানে অজ্ঞানে জড়িত বিহবল মুখ। কানের কাছে মাথা নামিয়ে আদিত্য বললে, “সরল এসেছে।” চোখ ঈষৎ মেলে নীরজা বললে, “তুমি যাও”– একবার ডেকে উঠল, “ঠাকুরপো!” কোথাও সাড়া নেই । # সরলা এসে প্রণাম করবার জন্য পায়ে হাত দিতেই যেন বিদ্যুতের আঘাতে ওর সমস্ত শরীর আক্ষিপ্ত হয়ে উঠল । প। দ্রুত আপনি গেল সরে । ভাঙা গলায় বলে উঠল, “পারলুম না, পারলুম না, দিতে পারব না, পারব না।” বলতে বলতে অস্বাভাবিক জোর এল দেহে— চোখের তারা প্রসারিত হয়ে জলতে লাগল। চেপে ধরলে সরলার হাত, কণ্ঠস্বর তীক্ষ হল, বললে, “জায়গা হবে না তোর রাক্ষসী, জায়গা হবে না। আমি থাকব, থাকব, থাকব ।” হঠাৎ টিলে-শেমিজ-পরা পাণ্ডুবৰ্ণ শীর্ণমূর্তি বিছানা ছেড়ে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে উঠল। অদ্ভূত গলায় বললে, “পালা পালা পালা এখনই, নইলে দিনে দিনে শেল বিধব তোর বুকে, শুকিয়ে ফেলব তোর রক্ত।” বলেই পড়ে গেল মেঝের উপর। গলার শব্দ শুনে আদিত্য ছুটে এল ঘরে, প্রাণের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে ফেলে দিয়ে নীরজার শেষ কথা তখন স্তব্ধ হয়ে গেছে।