পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○o রবীন্দ্র-রচনাবলী সংজ্ঞাবিচার পৌষমাসের বালকে উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা বাহির করিবার জন্ত ‘হুজুগ', 'ন্যাকামি', এবং ‘আহলাদে’ এই তিনটি শব্দ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছিলাম, পাঠকদের নিকট হইতে অনেকগুলি সংজ্ঞা আমাদের হাতে আসিয়াছে।’ কথাগুলি সম্পূর্ণ প্রচলিত। আমরা পরস্পর কথোপকথনে ওই কথাগুলি যখন ব্যবহার করি তখন কাহারও বুঝিবার ভুল হয় না, অথচ স্পষ্ট করিয়া অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বলিয়া থাকেন । ইহা হইতে এমন বুঝাইতেছে না যে, বাস্তবিকই ওই কথাগুলি ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বুঝিয়া থাকেন— কারণ, তাহা হইলে তো ও কথা লইয়া কোনো কাজই চলিত না। প্রকৃত কথা এই, আমরা অনেক জিনিস বুঝিয়া থাকি, কিন্তু কী বুঝিলাম সেটা ভালো করিয়া বুঝিতে অনেক চিন্তা আবশ্বক করে। যেমন আমরা অনেকে সহজেই সাতার দিতে পারি, কিন্তু কী উপায়ে সাতার দিতেছি তাহা বুঝাইয়া বলিতে পারি না। অথবা, একজন মানুষ রাগিলে তাহার মুখভঙ্গী দেখিলে আমরা সহজেই বলিতে পারি মানুষটা রাগিয়াছে ; কিন্তু আমি যদি পাচজনকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করি, আচ্ছা বলে দেখি রাগিলে মানুষের মুখের কিরূপ পরিবর্তন হয়, মুখের কোন কোন মাংসপেশির কিরূপ বিকার হয়, মুখের কোন অংশের কিরূপ অবস্থান্তর হয়, তাহা হইলে পাচজনের বর্ণনায় প্রভেদ লক্ষিত হইবে । অথচ ক্রুদ্ধ মনুস্যকে দেখিলেই পাচজনে বিনা মতভেদে সমস্বরে বলিয়া উঠিবে লোকটা ভারি চটিয়া উঠিয়াছে। পাঠকদের নিকট হইতে যে-সকল সংজ্ঞা পাইয়াছি তাহার কতকগুলি এই স্থানে পরে পরে আলোচনা করিয়া দেখিলেই পরস্পরের মধ্যে অনেক প্রভেদ দেখা যাইবে । একজন বলিতেছেন, ‘হুজুক—জনসাধারণের হৃদয়োম্মাদক আন্দোলন । তা যদি হয় তো, বুদ্ধ চৈতন্য যিশু ক্রমোয়েল ওয়াশিংটন প্রভৃতি সকলেই হুজুক করিয়াছিলেন । কিন্তু লেখক কখনোই সচরাচর কথোপকথনে এরূপ অর্থে হুজুক ব্যবহার করেন না। ইনিই বলিতেছেন, ‘স্তাকামি— অভিমানবশত কিছুতে অনিচ্ছা প্রকাশ অথবা ইচ্ছাসত্ত্বে অভিমানীর অনিচ্ছা প্রকাশ । ১ পাঠকদের প্রতি : বালকের যে-কোনো গ্রাহক ‘হুজুগ', স্তাকামি' ও 'আহ্নাদে’ শব্দের সর্বোৎকৃষ্ট সংক্ষেপ সংজ্ঞ ( definition ) লিখিয়া পৌষমাসের ২৭শে তারিখের মধ্যে আমাদিগের নিকট পাঠাইবেন উহাকে একটি ভালো গ্রন্থ পুরস্কার দেওয়া হইবে । একেকটি সংজ্ঞা পাটি পদের অধিক না হয়। বালক, ১২৯২ পৌষ ।