পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব Q8○ দ্বিতীয়ত, পুনঃ শব্দ হইতে পহু শব্দের উৎপত্তি শব্দতত্ত্ব অনুসারে আমার নিতান্ত অসম্ভব বোধ হয় না। বিশেষত, পুনঃ শব্দের পর বিসর্গ থাকাতে উক্ত বিসর্গ হ-এ এবং ন চন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া এবং উকারের স্থানবিপর্যয় নিয়মবিরুদ্ধ হয় নাই । নিবেদক শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । 〉 Rふふ २ পহু শব্দ বন্ধু শব্দ হইতে উৎপন্ন হয় নাই ইহা আপনি স্বীকার করেন, তথাপি উক্ত শব্দ যে প্রভূশব্দমূলক তাহা আপনার সংগত বোধ হয় না। কিন্তু পহু যে তৎসম বা .তদভব সংস্কৃত শব্দ নহে পরস্তু দেশজ শব্দ, আপনার এরূপ অনুমানের পক্ষে কোনো উপযুক্ত কারণ দেখাইতে পারেন নাই। কেবল আপনি বলিয়াছেন, “মধুররসসর্বস্ব প্ররকীয়া প্রেমে দাস্তাভাব অসংযুক্ত।” কিন্তু এই একমাত্র যুক্তি আমার নিকট যথেষ্ট প্রবল বোধ হয় না ; কারণ, বৈষ্ণবপদাবলীতে অনেক স্থানেই রাধিক আপনাকে কৃষ্ণের দাসী ও কৃষ্ণ আপনাকে রাধিকার দাস বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন। দ্বিতীয় কথা এই যে, পদাবলীতে স্থানে স্থানে পহু শব্দ প্ৰভু অথবা বঁধু ছাড়াও অন্ত অর্থে যে ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা আমরা দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রমাণ করিতে পারি। রাধামোহন দাস রাধিকার বিরহবর্ণনা করিতেছেন : প্রেমগজদলন সহই না পারই জীবইতে করই ধিকার । অন্তরগত তুহু নিরগত করইতে কত কত করত সঞ্চার। অথির নয়ন শরঘাতে বিষম জ্বর ছটফট জলজ শয়ান । রাধামোহন পহু কহই অপরূপ নহ যাহে লাগয়ে পাঁচবান । অর্থাৎ খামকে সম্বোধন করিয়া দূতী কহিতেছে : প্রেমগজের দলন সহিতে না পারিয়া রাধিক বাচিয়া থাকা ধিক্কারযোগ্য জ্ঞান করিতেছেন এবং অন্তর্গত তোমাকে নির্গত করিবার জন্ত বিবিধ চেষ্টা করিতেছেন। তোমার অস্থির নয়নশরঘাতে বিষম জরাতুর হইয়া বিরহিণী পদ্মশয়ন অবলম্বন করিয়াছেন। রাধামোহন কহিতেছেন, যাহাকে পঞ্চবাণ লাগে তাহার এরূপ আচরণ কিছুই অপরাপ নহে । এ স্থলে পহু শব্দের কী অর্থ হইতেছে। রাধামোহনের প্রভু বলিতেছেন এরূপ অর্থ ১ ক্ষীরোদচন্দ্র রায় চৌধুরী। পহু— সাধনা, ১২৯৯ চৈত্র।