পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব (t१७ সংকেত মাত্ৰ— যেখানে সে-সংকেত খাটে না, সেখানে তাহার কোনোই অর্থ নাই। ণিচূ-এর সংকেত বাংলায় খাটে না, তৰু পণ্ডিতমশায় যদি ওই কথাটাকে বাংলায় চালাইতে চান, তবে তাহার অর্থ এই দাড়ায় যে, সংস্কৃত নৌকা দাড়ে চলে, অতএব বাংলা ফসলের খেতে লাঙল চলিবে কেন, নিশ্চয়ই দাড় চলিবে । কিন্তু দাড় জিনিস অত্যন্ত দামি উৎকৃষ্ট জিনিস হইলেও তৰু চলিবে না। শ্র ধাতু যে-নিয়মে "শ্রাবি হয়, সেই নিয়মে শুন ধাতুর ‘শু ‘শো হইয়া ও পরে ইকার যোগে ‘শৌনিতেছে’ হইত। হয়তো খুব ভালোই হইত, কিন্তু হয় না যে সে আমার বা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের দোষ নহে। সংস্কৃত পঠ, ধাতুর উত্তরে শিচ প্রত্যয় করিয়া পাঠন হয়, বাংলায় সেই অর্থে পড়, ধাতু হইতে পড়ান হয় ‘পাড়ন হয় না। অতএব সেখানে তুহার সংকেতই কেহ মানিবে না, সেখানে অস্থানে অকারণে বৃদ্ধণিচসিগ্নালার তাহার প্রাচীন পতাকা তুলিয়া কেন বসিয়া থাকিবে, সে নাই-ও। তাহার স্থলে আর-একটি যে-সংকেত বসিয়া আছে, সে হয়তো তাহারই শ্ৰীমান পৌত্র, আমাদের ভক্তিভাজন •ণিচ, নহে ;– কৌলিক সাদৃশ্ব তো কিছু থাকিবেই, কিন্তু ব্যবহারের ব্যতিক্রমেই তাহার স্বাতন্ত্র্য ধরা পড়ে। তৰু যদি বাংলায় সেই শিচ, প্রত্যয়ই আছে বলিতে হয়, তবে ধ্রুপদের প্রতি সম্মান দেখাইবার জন্য কাওয়ালিকে চৌতাল নাম দিলেও দোষ হয় না। প্রতিবাদে লিখিত হইয়াছে ; যে সকল শব্দ লইয়া অভিনব ব্যাকরণ নির্মাণের চেষ্টা হইতেছে উহা একান্ত অকিঞ্চিৎকর । ঐ সকল শব্দের বহুল প্রয়োগে ভাষার গুরুত্ব ও মাধুর্য কতদূর রক্ষিত হইবে, তাহা নির্ণয় করা সহজ নহে। বাংলা বলিয়া একটা ভাষা আছে, তাহার গুরুত্ব মাধুর্য ওজন করা ব্যাকরণকারের কাজ নহে। সেই ভাষার নিয়ম বাহির করিয়া লিপিবদ্ধ করাই তাহার কাজ । সে-ভাষা যে ইচ্ছা ব্যবহার করুক বা না-করুক, তিনি উদাসীন। কাহারও প্রতি তাহার কোনো আদেশ নাই, অমুশাসন নাই। জীবতত্ত্ববিৎ কুকুরের বিষয়ও লেখেন, শেয়ালের বিষয়ও লেখেন। কোনো পণ্ডিত যদি তাহাকে ভৎসনা করিতে আসেন যে, তুমি যে শিয়ালের কথাটা এত আহুপূর্বিক লিখিতে বসিয়াছে, শেষকালে যদি লোকে শেয়াল পুষিতে আরম্ভ করে – তবে জীবতত্ত্ববিদ তাহার কোনো উত্তর না দিয়া তাহার শেয়াল সম্বন্ধীয় পরিচ্ছেদটা শেষ করিতেই প্রবৃত্ত হন। বঙ্গদর্শন-সম্পাদক যদি তাহার কাগজে মাছের তেলের উপর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখেন, তবে আশা করি কোনো পণ্ডিত র্তাহাকে এ অপবাদ দিবেন না যে, তিনি মাছের তেল মাথায় মাখিবার জন্য পাঠকদিগকে অন্যায় উত্তেজিত করিতেছেন।