পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী সঙ্গে তাহাদের নিকট হইতে আমরা এমন-একটা জিনিস পাই, যাহা আমাদের মনুষ্যত্ব বিকাশের পক্ষে অনুকুল নহে। আমাদের উপনিষদে আছে, “শ্রদ্ধয়া দেয়ম, অশ্রদ্ধয় অদেয়ম্।।” অশ্রদ্ধার সহিত দান করিলে দানের প্রকৃত ফললাভ হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অন্ত:করণকে অস্থিমজ্জাকে একেবারে দাসত্বে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে। তাই আমাদের নিজেদের শিক্ষার ভার নিজেদের হাতে রাখিতেই হইবে। পূর্বে যখন দেশ ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল, তখনও আমাদের সমাজ আপনাকে আপনি শিক্ষা দিয়াছে, আপনার ভিতরে আর প্রতিকূলত জন্মায় নাই। আজ আমাদের অন্তঃকরণের সম্মুখে যে বৃহৎ প্রয়োজন জাগিয়া উঠিয়াছে তাহাকে সার্থক করিতে হইলে যাহাতে আমরা নিজেদের শিক্ষাকে স্বাধীন করিতে পারি অধ্যবসায়ের সহিত, শান্তির সহিত, সাধনার সহিত, অামাদিগকে তাহারই ব্যবস্থা করিতে হইবে । গবর্মেণ্ট নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অপমান করিয়াছেন, তাহা নিজেকেই অপমান করা। ইহার জন্য গবর্মেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় বিধ্বস্ত হইলে আমরা দূরে গিয়া নিজেদের বিদ্যামন্দির প্রতিষ্ঠিত করিব। আমরা ভারি দুর্বল, ভারি অসহায়, এই ভাবিয়াই আমরা এতদিন আমাদিগকে এরূপ অশক্ত করিয়া রাখিয়াছিলাম। আজ আর আমরা ভয় পাই না। গবর্মেন্ট নিজের জিনিস চুৰ্ণ করুন, আমরা এই অপমানের মূলোচ্ছেদ ' করিবার জন্য ভারতের সরস্বতীকে আবার ভারতের নিজের মন্দিরে আনিয়া প্রতিষ্ঠিত করি । জানি না আমাদের নেতারা বিষয়টিকে ঠিক কিরূপ ভাবে দেখিবেন। যদি দেশের হৃদয় এইদিকে যথার্থই উন্মুখ হইয়া থাকে, তবে স্থায়ীভাবে এ অপমানের প্রতিকারের জন্য র্তাহারা নিঃসন্দেহ চেষ্টিত হইবেন । ইহার চেয়েও গুরুতর আশার কথা এই যে, এ পর্যন্ত যে-সকল ঘটনা ঘটিয়াছে তাহ নেতৃগণের বা আপনাদের কাহারও রচিত নয়, তাহা বিধাতারই অমোঘ বিধানে ঘটিয়াছে। এই আন্দোলনের সফলতার ভার তাহার হাতে, দেশের আবালবৃদ্ধবনিতাকে তিনিই শক্তি দিবেন। আপনার নিজের আদশের কাছে, স্বদেশের কাছে, ঈশ্বরের কাছে সত্য থাকিবেন ; তাহা হইলে আর কাহারও মুখাপেক্ষা করিয়া থাকিতে হইবে না। ১৬ই কাতিক বৃহস্পতিবার [ ১৩১২ ] ‘ফিল্ড এণ্ড একাডেমী ভবনে মেম্বর এবং ছাত্রগণের এক সান্ধ্যসম্মিলন হয়।. শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ শিক্ষা এবং স্বদেশী আন্দোলন সম্বন্ধে ] আলোচনা উত্থাপন করিয়া বলেন যে, বর্তমান বঙ্গব্যবচ্ছেদঘটিত ব্যাপারটা সার্বজনীন। ছাত্ররা যে ইহাতে যোগদান করিয়াছেন, তাহ অত্যন্ত স্বাভাবিক, ইহার জন্য র্তাহাদিগকে কোনো দোষ দেওয়া যায় না। নেতৃগণ আশানুরূপ ত্যাগস্বীকার করিতেছেন না বলিয়া যে একটা কথা উঠিয়াছে, সে সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, যদি নেতৃগণ এ বিষয়ে বাস্তবিকই অপরাধী হন, তবে সে-অপরাধ এক তাহাদের নয়, আমাদের পাচজনেরই ; কেননা আমাদের পাচজনের শক্তি সংহত হওয়াতেই নেতার শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই-যে আমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি অনাস্থার ভাব এটি খুব অমঙ্গলকর, ইহাতে আমাদের বলক্ষয়