পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ వె(t যতক্ষণ আয়ত্তচু্যত এই মেয়েটির মোহ তাহার মনটিকে আলোড়িত করিতেছিল ততক্ষণ নিজের বধৃটি সম্বন্ধে একেবারে অন্ধ হইয়া ছিলেন। নিকটেই আর কোথাও কিছু সাত্ত্বনার কারণ ছিল কি না তাহ অনুসন্ধান করিয়া দেখিবার প্রবৃত্তিও ছিল না। যেই শুনিলেন মেয়েটি বোবা ও কাল অমনি সমস্ত জগতের উপর হইতে একটা কালো পর্দা ছিন্ন হইয়া পড়িয়া গেল। দূরের আশা দূর হইয়। নিকটের জিনিসগুলি প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিল। সুগভীর পরিত্রাণের নিশ্বাস ফেলিয়া কাস্তি লজ্জাবনত বধূর মুখের দিকে কোনো-এক স্বযোগে চাহিয়া দেখিলেন। এতক্ষণে যথার্থ শুভদৃষ্টি হইল। চর্মচক্ষুর অন্তরালবতী মনোনেত্রের উপর হইতে সমস্ত বাধা খসিয়া পড়িল। হৃদয় হইতে এবং প্রদীপ হইতে সমস্ত আলোক বিচ্ছুরিত হইয়া একটিমাত্র কোমল সুকুমার মুখের উপরে প্রতিফলিত হইল ; কান্তি দেখিলেন, একটি স্নিগ্ধ শ্ৰী, একটি শাস্ত লাবণ্যে মুখখানি মণ্ডিত। বুঝিলেন, নবীনের আশীৰ্বাদ সার্থক হইবে। আশ্বিন ১৩০৭ যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ এক সময় যজ্ঞেশ্বরের অবস্থা ভালোই ছিল । এখন প্রাচীন ভাঙা কোঠাবাড়িটাকে সাপব্যাঙ-বাছুড়ের হস্তে সমর্পণ করিয়া খোড়ো ঘরে ভগবদগীতা লইয়া কালযাপন করিতেছেন । এগারো বৎসর পূর্বে র্তাহার মেয়েটি যখন জন্মিয়াছিল তখন বংশের সৌভাগ্যশশী কৃষ্ণপক্ষের শেষকলায় আসিয়া ঠেকিয়াছে। সেইজন্য সাধ করিয়া মেয়ের নাম রাখিয়াছিলেন কমলা । ভাবিয়াছিলেন, যদি এই কৌশলে ফাকি দিয়া চঞ্চলা লক্ষ্মীকে কন্যারূপে ঘরে ধরিয়া রাখিতে পারেন। লক্ষ্মী সে ফন্দিতে ধরা দিলেন না, কিন্তু মেয়েটির মুখে নিজের ঐ রাখিয়া গেলেন। বড়ো সুন্দরী মেয়ে। মেয়েটির বিবাহ সম্বন্ধে যজ্ঞেশ্বরের যে খুব উচ্চ আশা ছিল তাহা নহে। কাছাকাছি যে-কোনো একটি সৎপাত্রে বিবাহ দিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন । কিন্তু তাহার জ্যাঠাইমা তাহার বড়ো আদরের কমলাকে বড়ো ঘর না হইলে দিবেন না, পণ করিয়া বসিয়া আছেন। র্তাহার নিজের হাতে অল্প কিছু সংগতি ছিল, ভালো পাত্র পাইলে তাহা বাহির করিয়া দিবেন, স্থির করিয়াছেন। অবশেষে জ্যাঠাইমার উত্তেজনায় শাস্ত্ৰাধ্যয়নগুঞ্জিত শাস্ত পল্লীগৃহ ছাড়িয়া যজ্ঞেশ্বর