পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Φ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মেয়ের সহিত আমার বিবাহ দিল। কিন্তু ভাবিয়া দেখিলেন, নবীন তো তাহাকে বিবাহের পূর্বে কন্যা দেখাইতে চান নাই এমন নয়, তিনি নিজেই দেখিতে অসম্মত হইয়াছিলেন। বুদ্ধির দোষে যে এতবড়ো ঠকাটা ঠকিয়াছেন সে লজ্জার কথাটা কাহারে কাছে প্রকাশ না করাই শ্রেয়: বিবেচনা করিলেন। ঔষধ যেন গিলিলেন কিন্তু মুখের তারটা বিগড়াইয়া গেল। বাসরঘরের ঠাট্ট আমোদ কিছুই তাহার কাছে রুচিল না। নিজের এবং সর্বসাধারণের প্রতি রাগে র্তাহার সর্বাঙ্গ জলিতে লাগিল । এমন সময় হঠাৎ তাহার পাশ্ববর্তিনী বধু অব্যক্ত ভীত স্বরে চমকিয়া উঠিল। সহসা তাহার কোলের কাছ দিয়া একটা খরগোশের বাচ্ছা ছুটিয়া গেল । পরক্ষণেই সেদিনকার সেই মেয়েটি শশকশিশুর অনুসরণপূর্বক তাহাকে ধরিয়া গালের কাছে রাখিয়া একান্ত স্নেহে আদর করিতে লাগিল। “ওই রে, পাগলি আসিয়াছে” বলিয়া সকলে তাহাকে চলিয়া যাইতে ইঙ্গিত করিল। সে ভ্রক্ষেপমাত্র না করিয়া ঠিক বরকন্যার সম্মুখে বসিয়া শিশুর মতো কৌতুহলে কী হইতেছে দেখিতে লাগিল। বাড়ির কোনো দাসী তাহার হাত ধরিয়া টানিয়া লইবার চেষ্টা করিলে বর ব্যস্ত হইয়৷ কহিলেন, “আহা, থাক-না, বস্তুক।” মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী।” সে উত্তর না দিয়া দুলিতে লাগিল। ঘর মৃদ্ধ রমণী হাসিয়া উঠিল। কাস্তি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার হাসদুটি কত বড়ো হইল।” অসংকোচে মেয়েটি নীরবে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিল। হতবুদ্ধি কান্তি সাহসপূর্বক আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার সেই ঘুঘু আরাম হইয়াছে তো ?” কোনো ফল পাইলেন না । মেয়েরা এমনভাবে হাসিতে লাগিল যেন বর ভারি ঠকিয়াছেন । অবশেষে প্রশ্ন করিয়া খবর পাইলেন, মেয়েটি কালা এবং বোবা, পাড়ার যত পশুপক্ষীর প্রিয়সঙ্গিনী। সেদিন সে যে সুধা ডাক শুনিয়া উঠিয়া ঘরে গিয়াছিল সে তাহার অনুমান মাত্র, তাহার আর কোনো কারণ ছিল । কাস্তি তখন মনে মনে চমকিয়া উঠিলেন। যাহা হইতে বঞ্চিত হইয়া পৃথিবীতে র্তাহার কোনো সুখ ছিল না, শুভদৈবক্রমে তাহার নিকট হইতে পরিত্রাণ পাইয়া নিজেকে ধন্য জ্ঞান করিলেন। মনে করিলেন, যদি এই মেয়েটির বাপের কাছে যাইতাম এবং সে ব্যক্তি আমার প্রার্থনা -অনুসারে কন্যাটিকে কোনোমতে আমার হাতে সমর্পণ করিয়া নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করিত !