পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२>8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চারু তরুচ্ছায়ায় বসিয়া স্তব্ধ হইয়া শুনিতে লাগিল। পড়া শেষ হইলে ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “তুমি আবার লিখতে পার না!” সেদিন সেই গাছের তলায় অমল সাহিত্যের মাদকরস প্রথম পান করিল ; সাকী ছিল নবীনা, রসনাও ছিল নবীন এবং অপরাহের আলোক দীর্ঘ ছায়াপাতে রহস্যময় হইয়া আসিয়াছিল। চারু বলিল, “আমল, গোটাকতক আমড়া পেড়ে নিয়ে যেতে হবে, নইলে মন্দাকে কী হিসেব দেব।” মূঢ় মন্দাকে তাহাদের পড়াশুনা এবং আলোচনার কথা বলিতে প্রবৃত্তিই হয় না, স্বতরাং আমড়া পাড়িয়া লইয়া যাইতে হইল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ বাগানের সংকল্প তাহদের অন্যান্য অনেক সংকল্পের ন্যায় সীমাহীন কল্পনাক্ষেত্রের মধ্যে কখন হারাইয়া গেল তাহ অমল এবং চারু লক্ষও করিতে পারিল না । এখন অমলের লেখাই তাহাদের আলোচনা ও পরামর্শের প্রধান বিষয় হইয়া উঠিল। অমল আসিয়া বলে, “বোঠান, একটা বেশ চমৎকার ভাব মাথায় এসেছে।” চারু উৎসাহিত হইয়া উঠে ; বলে, “চলো, আমাদের দক্ষিণের বারান্দায়— এখানে এখনই মন্দা পান সাজতে আসবে।” চারু কাশ্মীরি বারান্দায় একটি জীর্ণ বেতের কেদারায় আসিয়া বসে এবং অমল রেলিঙের নিচেকার উচ্চ অংশের উপর বসিয়া পা ছড়াইয়া দেয়। অমলের লিখিবার বিষয়গুলি প্রায়ই সুনির্দিষ্ট নহে ; তাহা পরিষ্কার করিয়া বলা শক্ত। গোলমাল করিয়া সে যাহা বলিত তাহা স্পষ্ট বুঝা কাহারো সাধ্য নহে। অমল নিজেই বারবার বলিত, “বোঠান, তোমাকে ভালো বোঝাতে পারছি নে ৷” চারু বলিত, "না, আমি অনেকটা বুঝতে পেরেছি ; তুমি এইটে লিখে ফেলে, দেরি কোরো না ।” সে খানিকটা বুঝিয়া, খানিকট না বুঝিয়া, অনেকটা কল্পনা করিয়া, অনেকটা অমলের ব্যক্ত করিবার আবেগের দ্বারা উত্তেজিত হইয়া, মনের মধ্যে কী একটা খাড়া করিয়া তুলিত, তাহাতেই সে মুখ পাইত এবং আগ্রহে অধীর হইয়া উঠিত। চারু সেইদিন বিকালেই জিজ্ঞাসা করিত, “কতটা লিখলে।” অমল বলিত, “এরই মধ্যে কি লেখা যায়।”