পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিংশ পরিচ্ছেদ বন্ধুরা ভূপতিকে জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপারখানা কী। এত ব্যস্ত কেন।” ভূপতি কহিল, “খবরের কাগজ —” বন্ধু । আবার খবরের কাগজ ? ভিটেমাটি খবরের কাগজে মুড়ে গঙ্গার জলে ফেলতে হবে নাকি । ভূপতি। না, আর নিজে কাগজ করছি নে । বন্ধু । তবে ? ভূপতি। মৈণ্ডরে একটা কাগজ বের হবে, আমাকে তার সম্পাদক করেছে। বন্ধু। বাড়িঘর ছেড়ে একেবারে মৈশুরে যাবে ? চারুকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছ ? ভূপতি। না, মামার। এখানে এসে থাকবেন। বন্ধু । সম্পাদকি নেশা তোমার আর কিছুতেই ছুটল না । ভূপতি । মানুষের যা হোক একটা কিছু নেশা চাই । বিদায়কালে চারু জিজ্ঞাসা করিল, “কবে আসবে ?” ভূপতি কহিল, “তোমার যদি একলা বোধ হয়, আমাকে লিখে, আমি চলে আসিব ।” বলিয়া বিদায় লইয়া ভূপতি যখন দ্বারের কাছ পর্যন্ত আসিয়া পৌছিল তখন হঠাৎ চারু ছুটিয়া আসিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল, কহিল, “আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও । আমাকে এখানে ফেলে রেখে যেয়ে না ।” ভূপতি থমকিয়া দাড়াইয়া চারুর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মুষ্টি শিথিল হইয়া ভূপতির হাত হইতে চারুর হাত খুলিয়া আসিল। ভূপতি চারুর নিকট হইতে সরিয়া বারান্দায় আসিয়া দাড়াইল । ভূপতি বুঝিল, অমলের বিচ্ছেদস্মৃতি যে বাড়িকে বেষ্টন করিয়া জলিতেছে চারু দাবানল গ্রস্ত হরিণীর মতো সে বাড়ি পরিত্যাগ করিয়া পালাইতে চায়।— কিন্তু, আমার কথা সে একবার ভাবিয়া দেখিল না ? আমি কোথায় পলাইব । যে স্ত্রী হৃদয়ের মধ্যে নিয়ত অন্তকে ধ্যান করিতেছে, বিদেশে গিয়াও তাহাকে ভুলিতে সময় পাইব না ? নির্জন বন্ধুহীন প্রবাসে প্রত্যহ তাহাকে সঙ্গদান করিতে হইবে ? সমস্ত দিন পরিশ্রম করিয়া সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফিরিব তখন নিস্তব্ধ শোকপরায়ণ নারীকে লইয়া সেই সন্ধ্য। কী ভয়ানক হইয়া উঠিবে। যাহার অস্তরের মধ্যে মৃতভার, তাহাকে বক্ষের কাছে ধরিয়া রাখা, সে আমি কতদিন পারিব । আরো কত বৎসর প্রত্যহ আমাকে