পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ রবীন্দ্র-রচনাবলী হরেন। কিছুই হয় নি মা— কিছুই না— দাদা তোমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। সুকুমারী। এ কিরকম বিত্র ঠাট্টা। ছি ছি, সকলই অনাস্থষ্টি ! দেখো দেখি । আমার বুক এখনে ধড়াস-ধড়াস করছে। সতীশ মদ ধরেছে বুঝি ! সতীশ । পালাও— তোমাদের ছেলেকে নিয়ে এখনি পালাও । নইলে তোমাদের রক্ষণ নেই। হরেনকে লইয়া ত্ৰস্তপদে সুকুমারীর পলায়ন শশধর । সতীশ, আমন উতলা হেয়ে না। ব্যাপারটা কী বলে। হরেনকে কার হাত হতে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে । সতীশ । আমার হাত হতে । ( পিস্তল দেখাইয়া ) এই দেখো মেসোমশায় । দ্রুতপদে বিধুমুখীর প্রবেশ বিধু। সতীশ, তুই কোথায় কী সর্বনাশ করে এসেছিস বল দেখি। আপিসের সাহেব পুলিস সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে থানাতল্লাসি করতে এসেছে। যদি পালাতে হয় তো এই বেলা পালা । হায় ভগবান ! আমি তো কোনো পাপ করি নি, আমারই অদৃষ্টে এত দুঃখ ঘটে কেন। সতীশ । ভয় নেই– পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে ! শশধর । তবে কি তুমি— সতীশ । তাই বটে মেসোমশায়— যা সন্দেহ করছ তাই। আমি চুরি করে মাসির ঋণ শোধ করেছি। আমি চোর। মা, শুনে খুশি হবে, আমি চোর, আমি খুনী। এখন জার কঁদিতে হবে না— যাও যাও, আমার সম্মুখ হতে যাও । আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে । শশধর । সতীশ, তুমি আমার কাছেও তো কিছু ঋণী আছ, তাই শোধ করে श्रां७ ।। - সতীশ । বলে, কেমন করে শোধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি। শশধর । ওই পিস্তলটা দাও । সতীশ । এই দিলাম। আমি জেলেই যাব । না গেলে আমার পাপের ঋণশোধ হবে না । শশধর । পাপের ঋণ শাস্তির দ্বারা শোধ হয় না সতীশ, কর্মের দ্বারাই শোধ হয়। তুমি নিশ্চয় জেনো আমি অনুরোধ করলে তোমার বড়োসাহেব তোমাকে জেলে দেবেন ন। এখন হতে জীবনকে সার্থক করে বেঁচে থাকো ।