পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ৩২৩ সতীশ । মেসোমশায়, এখন আমার পক্ষে বাচা যে কত কঠিন তা তুমি জান না— মরব নিশ্চয় জেনে পায়ের তলা হতে আমার শেষ সুখের অবলম্বনটা আমি পদাঘাতে ফেলে দিয়ে এসেছি— এখন কী নিয়ে বঁচিব। শশধর । তবু বঁাচতে হবে, আমার ঋণের এই শোধ— আমাকে ফাকি দিয়ে পালাতে পারবে না । সতীশ । তবে তাই হবে। শশধর । আমার একটা অনুরোধ শোনো। তোমার মাকে আর মাসিকে অন্তরের সহিত ক্ষমা করে । সতীশ । তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করতে পার, তবে এ সংসারে কে এমন থাকতে পারে যাকে আমি ক্ষমা করতে না পারি। প্রণাম করিয়া মা, আশীৰ্বাদ করে, আমি সব যেন সহ করতে পারি— আমার সকল দোষগুণ নিয়ে তোমরা আমাকে যেমন গ্রহণ করেছ, সংসারকে আমি যেন তেমনি করে গ্রহণ করি । বিধু। বাবা, কী আর বলব। মা হয়ে আমি তোকে কেবল স্নেহই করেছি, তোর কোনো ভালো করতে পারি নি— ভগবান তোর ভালো করুন । দিদির কাছে আমি একবার তোর হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে নিই গে । প্রস্থান শশধর । তবে এসে সতীশ, আমার ঘরে আজ আহার করে যেতে হবে। দ্রুতপদে নলিনীর প্রবেশ নলিনী। সতীশ ! সতীশ । কী নলিনী । নলিনী। এর মানে কী। এ চিঠি তুমি আমাকে কেন লিখেছ। সতীশ । মানে যেমন বুঝেছিলে সেইটেই ঠিক। আমি তোমাকে প্রতারণা করে চিঠি লিখি নি। তবে আমার ভাগ্যক্রমে সকলই উলটা হয়। তুমি মনে করতে পার, তোমার দয়া উদ্রেক করবার জন্যই আমি— কিন্তু মেসোমশায় সাক্ষী আছেন, আমি অভিনয় করছিলেম না— তবু যদি বিশ্বাস না হয়, প্রতিজ্ঞারক্ষা করবার এখনো সময় আছে।