পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের খাতা VVG বৈকুণ্ঠ। ( কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া) একটা কথা আছে, “ যে সয় তারই জয়ঈশান। সে কথা আমি ভালো বুঝি নে। আমি একবার ছোটােবাবুকে— বৈকুণ্ঠ। খবরদার ঈশেন, আমার মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি, অবিনাশকে কোনো কথা বলতে পারবি নে। ঈশান। তবে চুপ করে বসে থাকব ? বৈকুণ্ঠ। না, আমি একটা উপায় ঠাউরেছি। এখানে জায়গাতেও আর কুলোচ্ছে না, এঁদের সকলেরই অসুবিধে হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি, তা ছাড়া অবিনাশের এখন ঘর-সংসার হল, তার টাকাকড়ির দরকার, তার উপরে ভার চাপাতে আমার আর ইচ্ছে নেই- আমি এখান থেকে যেতে চাই ঈশান। সে তো মন্দ কথা নয়, কিন্তুবৈকুণ্ঠ। ওর আর কিন্তুটিন্ত নেই ঈশেন। সময় উপস্থিত হলেই প্ৰস্তুত হতে হয়। ঈশান। তোমার লেখাপড়ার কী হবে ? বৈকুণ্ঠ। (হাসিয়া) আমার লেখা ! সে আবার একটা জিনিস ! সবাই হাসে, আমি কি তা জানি নে ঈশেন ? ও-সব রইল পড়ে। সংসারে লেখায় কারও কোনো দরকার নেই। ঈশান। ছোটােবাবুকে তো বলে কয়ে যেতে হবে ? বৈকুণ্ঠ। তা হলে সে কিছুতেই যেতে দেবে না। সে তো আর আমাকে “যাও” বলতে পারবে না। ঈশেন। গোপনেই যেতে হবে, তার পর তাকে লিখে জানাব । যাই, আমার নীরুকে একবার দেখে আসি গে । ( [উভয়ের প্রস্থান তিনকড়ি ও কেদারের প্রবেশ তিনকড়ি। দাদা, তুই তো আমাকে ফাকি দিয়ে হাসপাতালে পাঠালি, সেখান থেকেও আমি ফাকি দিয়ে ফিরেছি। কিছুতেই মলেম না। কেদার। তাই তো রে, দিব্যি টিকে আছিস যে । তিনকড়ি। ভাগ্যে, দাদা, একদিনও দেখতে যাও নি— কেদার । কেন রে ! তিনকড়ি। যম বেটা ঠাউরালে এ ছোড়ার দুনিয়ায় কেউই নেই, নেহাত তাচ্ছিল্য করে নিলে না। ভাই, তোকে বলব। কী, এই তিনকড়ের ভিতরে কতটা পদার্থ আছে সেইটে দেখবার জন্যে মেডিকাল কলেজের ছোকরাগুলো সব ছুরি উচিয়ে বসে ছিল— দেখে আমার অহংকার হত। যাই হােক দাদা, তুমি তো এখানে দিব্যি জমিয়ে বসেছে। কেদার। যা, যা, মেলা বকিস নে। এখন এ আমার আত্মীয়বাড়ি তা জানিস ? তিনকড়ি। সমস্তই জানি, আমার অগোচর কিছুই নেই। কিন্তু বুড়ো বৈকুণ্ঠকে দেখছি নে যে। তাকে বুঝি ঠেলে দিয়েছিস ? ঐটে তোর দোষ। কাজ ফুরোলেই কেদার। তিনকড়ে ! ফের ! কানমলা খাবি। তিনকড়ি। তা, দে মলে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে হয়, বৈকুণ্ঠকে যদি তুই ফাকি দিস তা হলে অধৰ্ম হবে, আমার সঙ্গে যা করিস সে আলাদা কেদার। ইস, এত ধর্ম শিখে এলি কোথা । তিনকড়ি। তা, যা বলিস ভাই, যদিচ তুমি-আমি এতদিন টিকে আছি। তবু ধর্ম বলে একটা কিছু আছে। দেখো কেদারদা, আমি যখন হাসপাতালে পড়ে ছিলাম, বুড়োর কথা আমার সর্বদা মনে হত। পড়ে পড়ে ভাবতুম, তিনকড়ি নেই, এখন কেন্দারদার হাত থেকে বুড়োকে কে ঠেকাবে। বড়ো দুঃখ হত । কেদার। দেখা তিনকড়ে, তুই যদি এখানে আমাকে জ্বালাতে আসিস তা হলে— তিনকড়ি। মিথ্যে ভয় করছি দাদা। আমাকে আর হাসপাতালে পাঠাতে হবে না। এখানে তুমি