পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8GS মহেন্দ্ৰ। তোমাকে আমি ভালোবাসি নাই, এমন কথা বলিলে ? বিনোদিনী। আমি সেই কথাই বলিতেছি। লুকাচুরি, ঢাকাঢাকি, একবার এদিক, একবার ওদিক— তোমার এই চােরের মতো প্রবৃত্তি দেখিয়া আমার ঘূণা জন্মিয়া গেছে। আর ভালো লাগে না। তুমি যাও। মহেন্দ্ৰ একেবারে মুহ্যমান হইয়া কহিল, “তুমি আমাকে ঘূণা কর, বিনোদ !” বিনোদিনী। হা, ঘূণা করি। মহেন্দ্র। এখনো প্ৰায়শ্চিত্ত করিবার সময় আছে, বিনোদ । আমি যদি আর দ্বিধা না করি, সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাই, তুমি আমার সঙ্গে যাইতে প্ৰস্তুত আছ ? বলিয়া মহেন্দ্ৰ বিনোদিনীর দুই হাত সবলে ধরিয়া তাহাকে কাছে টানিয়া লইল। বিনোদিনী কহিল, “ছাড়ো, আমার লাগিতেছে।” । মহেন্দ্র। তা লাগুক। বলো, তুমি আমার সঙ্গে যাইবে ? दिन्ानिने । न्ा, यदि ना । (कान्ाभCङश् •ा । মহেন্দ্ৰ। কেন যাইবে না। তুমিই আমাকে সর্বনাশের মুখে টানিয়া আনিয়াছ, আজ তুমি আমাকে পরিত্যাগ করিতে পরিবে না । তোমাকে যাইতেই হইবে। বলিয়া মহেন্দ্ৰ সুদৃঢ়বলে বিনোদিনীকে বুকের উপর টানিয়া লইল, জোর করিয়া তাহাকে ধরিয়া রাখিয়া কহিল, “তোমার ঘূণাও আমাকে ফিরাইতে পরিবে না, আমি তোমাকে লইয়া যাইবই, এবং বিনোদিনী সাবলে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইল । মহেন্দ্ৰ কহিল, “চারি দিকে আগুন জ্বালাইয়া তুলিয়াছ, এখন আর নিবাইতেও পরিবে না, পালাইতেও পরিবে না।” বলিতে বলিতে মহেন্দ্রের গলা চড়িয়া উঠিল, উচ্চৈঃস্বরে সে কহিল, “এমন খেলা কেন খেলিলে, বিনোদ । এখন আর ইহাকে খেলা বলিয়া মুক্তি পাইবে না। এখন তোমার আমার একই মৃত্যু।” মহেন্দ্রের উন্মত্ত দৃষ্টি এক নিমেষমাত্র মাতার মুখের দিকে ঘুরিয়া আসিল; তাহার পরে পুনরায় বিনোদিনীর দিকে চাহিয়া মহেন্দ্ৰ কহিল, “আমি সব ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেছি, বলো, তুমি আমার সঙ্গে যাইবে ?” বিনোদিনী ক্রুদ্ধ রাজলক্ষ্মীর মুখের দিকে একবার চাহিল। তাহার পর অগ্রসর হইয়া মহেন্দ্ৰ কহিল, “তবে আজকের মতো অপেক্ষা করো, আমি চলিলাম, কাল হইতে তুমি ছাড়া আর আমার কেহ রহিবে না।” বলিয়া মহেন্দ্ৰ চলিয়া গেল । এমন সময় ধোবা আসিয়া বিনোদিনীকে কহিল, “মােঠাকরুন, আর তো বসিতে পারি না। আজ যদি তোমাদের ফুরসত না থাকে তো আমি কাল আসিয়া কাপড় লইয়া যাইব ।” বিনোদিনী সাত দিনের দানা ওজন করিয়া আস্তাবলে পাঠাইয়া দিত, এবং নিজে জানালায় দাড়াইয়া ঘোড়ার খাওয়া দেখিত । গোপাল-চাকর আসিয়া কহিল, “বউঠাকরুন, ঝড়-বেহারা আজ দাদামশায়ের (সাধুচরণের ) সঙ্গে ঝগড়া করিয়াছে। সে বলিতেছে, তাহার কেরোসিনের হিসাব বুঝিয়া লইলেই সে সরকারবাবুর সংসারের সমস্ত কর্মই পূর্ববৎ চলিতেছে।