পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ Obr রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতিক্ষণে স্নান হইয়া আসিতে লাগিল। এমন সময় মহেন্দ্র ঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া বিহারীকে দেখিয়া চমকিয়া উঠিল। বিনোদিনীর প্রতি তাহার যে একটা ঔদাসীন্য জন্মিতেছিল, ঈর্ষার তাড়নায় তাহা দূর হইবার উপক্রম হইল। বিনোদিনী বিহারীর পায়ের কাছে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে দেখিয়া, প্ৰত্যাখ্যাত মহেন্দ্রের গর্বে আঘাত লাগিল। বিনোদিনীর সহিত বিহারীর চিঠিপত্র দ্বারা এই মিলন ঘটিয়াছে, ইহাতে তাহার। আর সন্দেহ রহিল না। এতদিন বিহারী বিমুখ হইয়াছিল, এখন সে যদি নিজে আসিয়া ধরা দেয়, তবে বিনোদিনীকে ঠেকাইবে কে। মহেন্দ্ৰ বিনোদিনীকে ত্যাগ করিতে পারে, কিন্তু আর-কাহারও হাতে ত্যাগ করিতে পারে না, তাহা আজ বিহারীকে দেখিয়া বুঝিতে পারিল। ব্যর্থরোষে তীব্র বিদ্রুপের স্বরে মহেন্দ্ৰ বিনোদিনীকে কহিল, “এখন তবে রঙ্গভূমিতে মহেন্দ্রের প্ৰস্থান, বিহারীর প্রবেশ! দৃশ্যটি সুন্দর— হাততালি দিতে ইচ্ছা হইতেছে। কিন্তু আশা করি, এই শেষ অঙ্ক, ইহার পরে আর কিছুই ভালো লাগিবে না।” বিনোদিনীর মুখ রক্তিম হইয়া উঠিল। মহেন্দ্রের আশ্রয় লইতে যখন তাহাকে বাধ্য হইতে হইয়াছে, তখন এ অপমানের উত্তর তাহার, আর কিছুই নাই— ব্যাকুল-দৃষ্টিতে সে কেবল একবার বিহারী খাট হইতে উঠিল— অগ্রসর হইয়া কহিল, “মহেন্দ্ৰ, তুমি বিনোদিনীকে কাপুরুষের মতো অপমান করিয়ো না— তোমার ভদ্রতা যদি তোমাকে নিষেধ না করে, তোমাকে নিষেধ করিবার অধিকার আমার আছে।” মহেন্দ্ৰ হাসিয়া কহিল, “ইহারই মধ্যে অধিকার সাব্যস্ত হইয়া গেছে ? আজ তোমার নূতন নামকরণ করা যাক- বিনোদ-বিহারী।” বিহারী অপমানের মাত্ৰা চডিতে দেখিয়া মহেন্দ্রের হাত চাপিয়া ধরিল। কহিল, “মহেন্দ্ৰ, বিনোদিনীকে আমি বিবাহ করিব, তোমাকে জানাইলাম, অতএব এখন হইতে সংযতভাবে কথা কও ” শুনিয়া মহেন্দ্র বিস্ময়ে নিস্তব্ধ হইয়া গেল, এবং বিনােদিনী চমকিয়া উঠিল— বুকের মধ্যে তাহার সমস্ত রক্ত তোলপাড় করিতে লাগিল। বিহারী কহিল, “তোমাকে আর-একটি খবর দিবার আছে— তোমার মাতা মৃত্যুশয্যায় শয়ন, ভৃত্যুর ঝুড়িবার কােনাে আশা নাই। আমি আজ রাত্রের গাড়িতেই যাইব। বিনােদিনীও আমার সঙ্গে तंत्र ।।” বিহারী কহিল, “সারিবার অসুখ নহে। কখন কী হয়, বলা যায় না।” মহেন্দ্র তখন আর-কোনো কথা না বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। বিনােদিনী তখন বিহারীকে বলিল, “যে কথা তুমি বলিলে, তাহা তোমার মুখ দিয়া কেমন করিয়া বাহির হইল! এ কি ঠাট্টা।” বিনোদিনী । এই পাপিষ্ঠাকে উদ্ধার করিবার জন্য ? বিহারী। না। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলিয়া, শ্রদ্ধা করি বলিয়া। বিনোদিনী। এই আমার শেষ পুরস্কার হইয়াছে। এই যেটুকু স্বীকার করিলে ইহার বেশি আর আমি কিছুই চাই না। পাইলেও তাহা থাকিবে না, ধর্ম কখনো তাহা সহ্য করিবেন না। বিহারী। কেন করিবেন না। বিনোদিনী। ছিছি, এ কথা মনে করিতে লজ্জা হয়। আমি বিধবা, আমি নিন্দিতা, সমস্ত সমাজের কাছে আমি তোমাকে লাঞ্ছিত করিব, এ কখনাে হইতেই পারে না। ছিছি, এ কথা তুমি মুখে আনিয়াে କn || বিহারী। তুমি আমাকে ত্যাগ করিবে ? বিনােদিনী। ত্যাগ করিবার অধিকার আমার নাই। তুমি গোপনে অনেকের অনেক ভালো