পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নিবন্ধ (? どか○ রসিক কহিলেন, “আচ্ছা, পরীক্ষা করে দেখুন মিষ্টান্নে যদি সভার কার্য রোধ হয় তা হলে—” বিপিন মৃদুস্বরে কহিল, “তা হলে ভবিষ্যতে নাহয় সভাটা বন্ধ রেখে মিষ্টান্নটা চালালেই হবে।” চন্দ্ৰবাবু নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে দেখিতে শৈলের সুন্দর সুকুমার চেহারাটি কিয়ৎপরিমাণে আয়ত্ত করিয়া লইলেন। তখন শৈলকে ক্ষুন্ন করিতে তাহার আর প্রবৃত্তি হইল না। বলা আবশ্যক, অচিরকাল পূর্বেই বিপিন জলযোগ করিয়াই বাড়ি হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল। তাহার ভোজনের ইচ্ছামাত্র ছিল না, কিন্তু এই প্রিয়দর্শন কুমারটিকে দেখিয়া, বিশেষত তাহার মুখের অত্যন্ত কোমল একটি স্মিতহাস্যে, বিপুলবলশালী বিপিনের চিত্ত হঠাৎ এমনি স্নেহাকৃষ্ট হইয়া পড়িল যে, অস্বাভাবিক মুখরতার সহিত মিষ্টান্নের প্রতি সে অতিরিক্ত লোলুপতা প্ৰকাশ করিল। রোগভীরু শ্ৰীশের অসময়ে খাইবার সাহস ছিল না, তাহারও মনে হইল, না খাইতে বসিলে এই তরুণ শ্ৰীশ কহিল, “আসুন রসিকবাবু, আপনি উঠছেন না যে।” রসিক। রোজ রোজ যেচে এবং মাঝে মাঝে কেড়ে খেয়ে থাকি, আজ চিরকুমার-সভার সভােরাপে আপনাদের সংসৰ্গগৌরবে কিঞ্চিৎ উপরোধের প্রত্যাশায় ছিলাম, কিন্তু— শৈল। কিন্তু আবার কি রসিকদাদা ? তুমি যে, রবিবার করে থাক, আজ তুমি কিছু খাবে নাকি ? রসিক । দেখেছেন মশায় ! নিয়ম আর কারও বেলায় না, কেবল রসিকদাদার বেলায় ! নাঃ– বলং বলং বাহুবলম! উপরোধ-অনুরোধের অপেক্ষা করা নয়। বিপিন । ( চারটিমাত্র ভোজনপত্ৰ দেখিয়া ) আপনি আমাদের সঙ্গে বসবেন না ! শৈল । না, আমি আপনাদের পরিবেশন করব । শ্ৰীশ উঠিয়া কহিল, “ সে কি হয় ।” শৈল কহিল, “আমার জন্যে আপনারা অনেক অনিয়ম সহ করেছেন, এখন আমার আর একটিমাত্ৰ ইচ্ছা পূৰ্ণ করুন। আমাকে পরিবেশন করতে দিন, খাওয়ার চেয়ে তাতে আমি ঢের বেশি ভালোবাসি। এরকম রুচিভেদে বোধ হয় পরস্পরের কিছু সুবিধা আছে। আহার আরম্ভ হইল । শৈল। চন্দ্ৰবাবু, ওটা মিষ্টি, ওটা আগে খাবেন না, এই দিকে তরকারি আছে। জলের গ্রাস খুঁজছেন ? এই-যে গ্রাস।— বলিয়া গ্রাস অগ্রসর করিয়া দিল । চন্দ্ৰবাবুর নির্মলাকে মনে পড়িল। মনে হইল। এই বালকটি যেন নির্মলার ভাই। আত্মসেবায় অনিপুণ চন্দ্ৰবাবুর প্রতি শৈলের একটু বিশেষ স্নেহােন্দ্ৰেক হইল। চন্দ্ৰবাবুর পাতে আম ছিল, তিনি সেটাকে ভালোরূপ আয়ত্ত করিতে পারিতেছিলেন না— অনুতপ্ত শৈল তাড়াতাড়ি তাহা কাটিয়া সহজসাধ্য করিয়া দিল। যে সময়ে যেটি আবশ্যক সেটি আস্তে আস্তে হাতের কাছে জোগাইয়া দিয়া তাহার ভোজন-ব্যাপারটি নিবিঘ্ন করিতে লাগিল । চন্দ্র । শ্ৰীশবাবু, স্ত্রীসভা নেওয়া সম্বন্ধে আপনি কিছু বিবেচনা করেছেন ? শ্ৰীশ । ভেবে দেখতে গেলে ওতে আপত্তির কারণ বিশেষ নেই, কেবল সমাজের আপত্তির কথাটা আমি ভাবি ৷ বিপিনের তর্কপ্ৰবৃত্তি চড়িয়া উঠিল। কহিল, “সমাজকে অনেক সময় শিশুর মতো গণ্য করা উচিত । শিশুর সমস্ত আপত্তি মেনে চললে শিশুর উন্নতি হয় না, সমাজ সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথা খাটে !” আজ শ্ৰীশ উপস্থিত প্ৰস্তাবটা সম্বন্ধে অনেকটা নরমভাবে ছিল, নতুবা উত্তাপ হইতে বাষ্প ও বাস্প