পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ Σ. δ (Κ দিনরাত চলছে নির্জল ব্র্যাণ্ডি। খাওয়াদাওয়া প্রায় নেই। একে শরীর পূর্ব থেকেই ছিল অবসন্ন, তার পরে এই প্রচণ্ড অনিয়মে বিকারের সঙ্গে রক্তবমন দেখা দিল । কলকাতা থেকে ডাক্তার এল— দিনরাত মাথায় বরফ চাপিয়ে রাখলে । মুকুন্দলাল যাকে দেখেন খেপে ওঠেন, তার বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে বাড়িমৃদ্ধ লোকের চক্রান্ত । ভিতরে ভিতরে একটা নালিশ গুমরে উঠছিল— এরা যেতে দিলে কেন । একমাত্র মানুষ যে র্তার কাছে আসতে পারত সে কুমুদিনী । সে এসে পাশে বসে ; ফ্যাল ফ্যাল করে তার মুখের দিকে মুকুন্দলাল চেয়ে দেখেন— যেন মার সঙ্গে ওর চোখে কিম্বা কোথাও একটা মিল দেখতে পান। কখনও কখনও বুকের উপরে তার মুখ টেনে নিয়ে চুপ করে চোখ বুজে থাকেন, চোখের কোণ দিয়ে জল পড়তে থাকে, কিন্তু কখনও ভুলে একবার তার মার কথা জিজ্ঞাসা করেন না। এ দিকে বৃন্দাবনে টেলিগ্রাম গেছে। কত্রীঠাকরুনের কালই ফেরবার কথা। কিন্তু শোনা গেল, কোথায় এক জায়গায় রেলের লাইন গেছে ভেঙে । 이 সেদিন তৃতীয়া ; সন্ধ্যাবেলায় ঝড় উঠল। বাগানে মড়, মড় করে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। থেকে থেকে বৃষ্টির ঝাপটা ঝাকানি দিয়ে উঠছে ক্রুদ্ধ অধৈর্যের মতো। লোকজন খাওয়াবার জন্যে যে চালাঘর তোলা হয়েছিল তার করোগেটেড লোহার চাল উড়ে দিঘিতে গিয়ে পড়ল । বাতাস বাণবিদ্ধ বাঘের মতো গো গে। করে গোঙরাতে গোঙরাতে আকাশে আকাশে লেজ ঝাপটা দিয়ে পাক খেয়ে বেড়ায় । হঠাৎ বাতাসের এক দমকে জানলাদরজাগুলো খড় খড় করে কেঁপে উঠল। কুমুদিনীর হাত চেপে ধরে মুকুন্দলাল বললেন, “মা কুমু, ভয় নেই, তুই তো কোনো দোষ করিস নি। ওই শোন দাতকড়মড়ানি, ওরা আমাকে মারতে আসছে।” বাবার মাথায় বরফের পুটুলি বুলোতে বুলোতে কুমুদিনী বলে, “মারবে কেন বাবা ? ঝড় হচ্ছে ; এখনই থেমে যাবে।” “বৃন্দাবন ? বৃন্দাবন চন্দ্র চক্রবর্তী ! বাবার আমলের পুরুত— সে তো মরে গেছে— ভূত হয়ে গেছে বৃন্দাবনে। কে বললে সে আসবে ?” • “কথা কোয়ে না বাবা, একটু ঘুমোও।” “ওই যে, কাকে বলছে, খবরদার, খবরদার ” “কিছু না, বাতাসে বাতাসে গাছগুলোকে বাকানি দিচ্ছে।”