পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ వృ9 বিলিতি পাল-খেলাবার দুটি নৌকো, তাদের একটির গায়ে লেখা 'মধুমতী’, আরএকটির গায়ে মধুকরী। যে তাবুতে রাজাবাহাদুর স্বয়ং থাকবেন তার সামনে ফ্রেমে হলদে বনাতের উপর লাল রেশমে বোন মধুচক্র । একটা তাবু অন্তঃপুরের, সেখান থেকে জল পর্যন্ত চাটাই দিয়ে ঘেরা ঘাট। ঘাটের উপরেই মস্ত নিমগাছের গায়ে কাঠের ফলকে লেখা, মধুসাগর। খানিকটা জমিতে নানা আকারের চানকায় স্বর্যমুখী রজনীগন্ধ, গাদা দোপাটি, ক্যান ও পাতাবাহার, কাঠের চোঁকে বাক্সে নানা রঙের বিলিতি ফুল। মাঝে একটি ছোটো বাধানে জলাশয়, তারই মধ্যে লোহার ঢালাই-করা নগ্ন স্ত্রীমূর্তি, মুখে শাখ তুলে ধরেছে, তার থেকে ফোয়ারার জল বেরোবে। এই জায়গাটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মধুকুঞ্জ’। প্রবেশপথে কারুকাজকরা লোহার গেট, উপরে নিশান উড়ছে— নিশানে লেখা ‘মধুপুরী । চারি দিকেই 'মধু' নামের ছাপ। নানা রঙের কাপড়ে কানাতে চাদোয়ায় নিশানে রঙিন ফুলে চীনালন্ঠনে হঠাৎ-তৈরি এই মায়াপুরী দেখবার জন্যে দূর থেকে দলে দলে লোক আসতে লাগল। এ দিকে ঝকঝকে চাপরাস-ঝোলানো, হলদের উপর লাল পাড় দেওয়া পাগড়ি-বাধা, জরির ফিতে-দেওয়া লাল বনাতের উদিপর চাপরাসির দল বিলিতি জুতো মসমসিয়ে বেড়ায়, সন্ধ্যাবেলায় বন্দুকে ফণক আওয়াজ করে, দিনরাত প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজায়, তাদের কারও কারও চামড়ার কোমরবন্ধে ঝোলানো বিলিতি তলোয়ারটা জমিদারের মাটিকে পায়ে পায়ে খোচা দিতে থাকে। চাটুজ্যেদের সাবেক কালের জীর্ণসাজপর বরকন্দাজের। লজ্জায় ঘর হতে বার হতে চায় না। কাও দেখে চাটুজ্যে-পরিবারের গায়ে জাল ধরল। কুরনগরের পাজরটার মধ্যে বিধিয়ে দিয়ে শেলদণ্ডের উপর আজ ঘোষালদের জয়পতাকা উড়েছে। শুভপরিণয়ের এই সুচনা। Ꮌ ☾ বিপ্রদাস নবগোপালকে ডেকে বললে, “নৰু, আড়ম্বরে পাল্লা দেবার চেষ্টা— ওটা ইতরের কাজ।” নবগোপাল বললে, “চতুমুর্থ তার পা ঝাড় দিয়েই বেশি মানুষ গড়েছেন ; চারটে মুখ কেবল বড়ে বড়ো কথা বলবার জন্যেই। সাড়ে পনেরো আন লোক যে ইতর, তাদের কাছে সন্মান রাখতে হলে ইতরের রাস্তাই ধরতে হয়।” বিপ্রদাস বললে, “তাতেও তুমি পেরে উঠবে না। তার চেয়ে সাত্বিকভাবে কাজ