পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ২১৫ বিপ্রদাস কাউকে না জানিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গেল স্টেশনে। গাড়ি এসে পৌঁছোল, তখন বেলা পাচটা । সেলুন-গাড়ি থেকে রাজা নামল দলবল নিয়ে। বিপ্রদাসকে দেখে শুষ্ক সংক্ষিপ্ত নমস্কার করে বললে, “এ কী, আপনি কেন কষ্ট করে ?” বিপ্রদাস। বিলক্ষণ ! এই প্রথম আসা আমার দেশে, অভ্যর্থনা করে নেব না ? রাজা । ভুল করছেন। আপনার দেশে এখনও আসি নি। সে হবে বিয়ের দিনে । বিপ্রদাস কথাটার মানে বুঝতে পারলে না। স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে তর্ক করবার জায়গা নয়— তাই কেবল বললে, “ঘাটে বজর তৈরি।” রাজা বললে, “দরকার হবে না, আমাদের স্টীমলঞ্চ এসেছে।” বিপ্রদাস বুঝলে সুবিধে নয়। তবু আর-একবার বললে, “খাওয়া-দাওয়ার জিনিসপত্র, রম্বয়ের নৌকো সমস্তই প্রস্তুত।” “কেন এত উৎপাত করলেন ! কিছুই দরকার হবে না। দেখুন, একটা কথা মনে রাখবেন, এসেছি আমার পূর্বপুরুষদের জন্মভূমিতে— আপনাদের দেশে না । বিয়ের দিনে সেখানে যাবার কথা ।” বিপ্রদাস বুঝলে কিছুতেই নরম হবার আশা নেই। বুকের ভিতরটা দমে গেল । স্টেশনের বসবার ঘরে কেদণরায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। শীতের সন্ধ্যা, অন্ধকার হয়ে এসেছে। উত্তর থেকে গাড়ি আসবার জন্যে ঘণ্টা পড়ল, স্টেশনে আলো জলল— লাগাম ছেড়ে ঘোড়াকে নিজের মরজিমত চলতে দিয়ে বিপ্রদাস যখন বাড়ি ফিরলে তখন যথেষ্ট রাত। কোথায় গিয়েছিল, কী ঘটেছিল, কাউকে কিছুই বললে না। সেইদিন রাত্রে ওর ঠাণ্ড লেগে কাশি আরম্ভ হল। ক্রমেই চলল বেড়ে । উপেক্ষা করতে গিয়ে ব্যামোটাকে আরও উসকে তুললে। শেষকালে কুমু ওকে অনেক ধরে কয়ে এনে বিছানায় শোওয়ায় । অনুষ্ঠানের সমস্ত ভারই পড়ল নবগোপালের উপর। >W。 দু-দিন পরেই নবগোপাল এসে বললে, “কী করি একটা পরামর্শ দাও।” বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “কেন ? কী হয়েছে ?” “সঙ্গে গোটাকতক সাহেব— দালাল হবে, কিম্বা মদের দোকানের বিলিতি শুড়ি— কাল পীরপুরের চরের থেকে কিছু না হবে তো দু শো কাদাখোচ পাখি মেরে নিয়ে উপস্থিত। আজ চলেছে চন্দনদহের বিলে। এই শীতের সময় সেখানে হাসের