পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ミ>> খানিকক্ষণ চুপ করে রইল— দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। ক্ষেমাপিসি বললে, “সময় হল যে ।” বিপ্রদাস কুমুর মাথায় হাত দিয়ে রুদ্ধকণ্ঠে বললে, “সর্বশুভদাতা কল্যাণ করুন।” বলেই ধৰ্প করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। বিবাহের সমস্তক্ষণ কুমুর দু চোখ দিয়ে কেবল জল পড়েছে। বরের হাতে যখন হাত দিলে সে হাত ঠাণ্ড হিম, আর থরথর করে কঁপিছে। শুভদৃষ্টির সময় সে কি স্বামীর মুখ দেখেছে ? হয়তো দেখে নি। এদের ব্যবহারে সবস্থদ্ধ জড়িয়ে স্বামীর উপর ওর ভয় ধরে গেছে। পাখির মনে হচ্ছে তার জন্যে বাসা নেই, আছে ফাস । মধুসূদন দেখতে কুত্র নয় কিন্তু বড়ো কঠিন। কালে মুখের মধ্যে যেটা প্রথমেই চোখে পড়ে সে হচ্ছে পাখির চঞ্চুর মতো মস্ত বড়ো বাক নাক, ঠোটের সামনে পর্যন্ত ঝুকে পড়ে যেন পাহারা দিচ্ছে। প্রশস্ত গড়ানে কপাল ঘন ভ্রর উপর বাধাপ্রাপ্ত স্রোতের মতো স্ফীত। সেই ভ্রর ছায়াতলে সংকীর্ণ তির্যক চক্ষুর দৃষ্টি তীব্র। গোফদাড়ি কামানো, ঠোট চাপ, চিবুক ভারি। কড়া চুল কাফ্রিদের মতো কোকড়, মাথার তেলে ঘেঁষে ছাট। খুব অঁাটসাট শরীর ; যত বয়েস তার চেয়ে কম বোধ হয়, কেবল দুই রগের কাছে চুলে পাক ধরেছে। বেটে, মাথায় প্রায় কুমুদিনীর সমান। হাত দুটাে রোমশ ও দেহের তুলনায় খাটাে। সবস্থদ্ধ মনে হয় মানুষটা একেবারে নিরেট ; মাথা থেকে পা পর্যন্ত সর্বদাই কী একটা প্রতিজ্ঞ যেন গুলি পাকিয়ে আছে। যেন ভাগ্যদেবতার কামান থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে একাগ্রভাবে চলেছে একটা একগুঁয়ে গোল । দেখলেই বোঝা যায়, বাজে কথা বাজে বিষয় বাজে মানুষের প্রতি মন দেবার ওর একটুও অবকাশ নেই। বিবাহটা এমন ভাবে হল যে, সকলেরই মনে খারাপ লাগল। বরপক্ষ-কন্যাপক্ষের প্রথম সংস্পৰ্শমাত্রই এমন একটা বেস্থর ঝনঝনিয়ে উঠল যে, তার মধ্যে উৎসবের সংগীত কোথায় গেল তলিয়ে। থেকে থেকে কুমুর মনের একটা প্রশ্ন অভিমানে বুক ঠেলে ঠেলে উঠছে, ঠাকুর কি তবে আমাকে ভোলালেন ? সংশয়কে প্রাণপণে চাঁপা দেয়, রুদ্ধঘরের মধ্যে একলা বসে বারবার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে ; বলে, মন যেন দুর্বল না হয়। সবচেয়ে কঠিন হয়েছে দাদার কাছে সংশয় লুকোনো। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে কুমুদিনীর সেবার পরেই বিপ্রদাসের একান্ত নির্ভর। কাপড়চোপড়, দিনখরচের টাকাকড়ি, বইয়ের আলমারি, ঘোড়ার দানা, বন্দুকের 3|S (t