পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬০ রবীন্দ্র-রচনাবলী "এবার জিনিসপত্রগুলো বাক্সয় তোলে৷ ” “তোমার বুদ্ধিতে যদি তুলি, তা হলে আবার কালই বের করতে হবে। কেন ? তোমার দাদার মেজাজ ভালো নেই বুঝি ?” “আমি তো চিনি ওঁকে। এবার বোধ হচ্ছে এখানকার বাসায় হাত পড়বে।” “তা চলোই না। অত ভাবছ কেন ? সেখানে তো জলে পড়বে না ?” “আমাকে চলতে বলছ কিসের জন্তে ? এবারে হুকুম হবে মেজেবিউকে দেশে পাঠিয়ে দাও।” “সে হুকুম তুমি মানতে পারবে না জানি।” “কেমন করে জানলে ?” “আমি কেবল একাই জানি মনে কর, তা নয়— বাড়িসুদ্ধ সবাই তোমাকে স্ত্রৈণ বলে জানে। পুরুষমানুষ যে কী করে স্ত্রৈণ হতে পারে এতদিন তোমার দাদা সে কথা বুঝতেই পারত না। এইবার নিজের বোঝবার পাল এসেছে।” “বল কী ?” “আমি তো দেখছি তোমাদের বংশে ও রোগটা আছে। এতদিন বড়োভাইয়ের ধাতটা ধরা পড়ে নি। অনেক কাল জমা হয়ে ছিল বলে তার কাজটা খুব বেশি হবে, দেখে নিয়ো এই আমি বলে দিলাম। যে জোরের সঙ্গে জগৎ-সংসার ভুলে টাকার থলে অঁাকড়ে বসেছিল, ঠিক সেই জোরটাই পড়বে বউয়ের উপর।” “তাই পড়ুক। বড়ে স্ত্রৈণটি আসর জমান কিন্তু মেজে স্ত্রৈণটি বাচবে কাকে নিয়ে ?” *সে ভাবনার ভার আমার উপরে। এখন আমি তোমাকে যা বলি তাই করে । ওঁর দেরাজ তোমাকে সন্ধান করতে হবে ।” নবীন হাত জোড় করে বললে, “দোহাই তোমার মেজেবিউ— সাপের গর্তে হাত দিতে যদি বলতে আমি দিতুম, কিন্তু দেরাজে না।” “সাপের গর্তে যদি হাত দিতে হত তবে নিজে দিতুম কিন্তু দেরাজটা সন্ধান তোমাকেই করতে হবে। তুমি তো জান এ বাড়ির সব চিঠিই প্রথমে ওঁকে ন৷ দেখিয়ে কাউকে দেবার হুকুম নেই। আমার মন বলছে ওঁর হাতে চিঠি এসেছে।” “আমারও মন তাই বলছে, কিন্তু সেইসঙ্গে এও বলছে ও চিঠিতে যদি আমি হাত ঠেকাই তা হলে দাদা উপযুক্ত দণ্ড খুজেই পাবে না। বোধ হয় সাত বছর সশ্রম ফাসির হুকুম হবে।” “কিছু তোমাকে করতে হবে না, চিঠিতে হাত দিয়ে না, কেবল একবার দেখে এসে দিদির নামে চিঠি আছে কি না।” ff