পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ રજ(? SDS যে ভিক্ষুকের ঝুলিতে কেবল তুষ জমেছে চাল জোটে নি, তারই মতো মন নিয়ে আজ সকালে মধুসূদন খুব রুক্ষভাবেই বাইরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু অতৃপ্তির আকর্ষণ বড়ো প্রচণ্ড । বাধাতেই বাধার উপর টেনে আনে। ওকে দেখেই হাবলুর মুখ শুকিয়ে গেল, বুক উঠল কেঁপে, পালাবার উপক্রম করলে। কুমু জোর করে চেপে ধরলে, উঠতে দিলে না। সেটা মধুসুদন বুঝতে পারলে। হাবলুকে খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, “এখানে কী করছিস ? পড়তে যাবি নে ?” গুরুমশায়ের আসবার সময় হয় নি এ কথা বলবার সাহস হাবলুর ছিল না— ধমকটাকে নিঃশব্দে স্বীকার করে নিয়ে মাথা হেঁট করে আস্তে আস্তে উঠে চলল। তাকে বাধা দেবার জন্যে উদ্যত হয়েই কুমু থেমে গেল। বললে, “তোমার ফুল ফেলে গেলে যে, নেবে না ?” বলে সেই রুমালের পুটুলিটা ওর সামনে তুলে ধরলে। হাবলু না নিয়ে ভয়ে ভয়ে তার জ্যাঠামশায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল । মধুসূদন ফস করে পুটুলিট কুমুর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “এ রুমালটা কণর ?” মুহূর্তের মধ্যে কুমুর মুখ লাল হয়ে উঠল ; বললে, “আমার।” এ রুমালটা যে সম্পূর্ণ ই কুমুর, তাতে সন্দেহ নেই– অর্থাৎ বিবাহের পূর্বের সম্পত্তি। এতে রেশমের কাজ করা যে পাড়টা সেও কুমুর নিজের রচনা। ফুলগুলো বের করে মাটিতে ফেলে মধুসূদন রুমালটা পকেটে পুরলে ; বললে, “এটা আমিই নিলুম– ছেলেমানুষ এ নিয়ে কী করবে ? যা তুই ।” মধুসূদনের এই রূঢ়তায় কুমু একেবারে স্তম্ভিত। ব্যথিতমুখে হাবলু চলে গেল, কুমু কিছুই বললে না । তার মুখের ভাব দেখে মধুসূদন বললে, “তুমি তো দানসত্র খুলে বসেছ, ফাকি কি আমারই বেলায় ? এ রুমাল রইল আমারই ; মনে থাকবে কিছু পেয়েছি তোমার কাছ থেকে ।” মধুসুদন যা চায় তা পাবার বিরুদ্ধে ওর স্বভাবের মধ্যেই বাধা । কুমু চোখ নিচু করে সোফার প্রাস্তে নীরবে বসে রইল। শাড়ির লাল পাড় তার মাথা ঘিরে মুখটিকে বেষ্টন করে নেমে এসেছে, তারই সঙ্গে সঙ্গে নেমেছে তার ভিজে এলো চুল। কণ্ঠের নিটোল কোমলতাকে বেষ্টন করে আছে একগাছি সোনার হার ।