পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ S) o S) মোতির মা বললে, “তা হোক, কিন্তু বিপ্রদাসবাবুর উপরে রাগটা ওঁকে যেন পাগলামির মতো পেয়ে বসেছে, দিনে দিনে বেড়েই চলল। এ কী অনাছিষ্টি বলে দিকি !” * নবীন বললে, “ও-মানুষের ভক্তির প্রকাশ ওই রকমই। এই জাতের লোকেরাই ভিতরে ভিতরে যাকে শ্রেষ্ঠ বলে জানে বাইরে তাকে মারে। কেউ কেউ বলে রামের প্রতি রাবণের অসাধারণ ভক্তি ছিল, তাই বিশ হাত দিয়ে নৈবেদ্য চালাত । আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি দাদার সঙ্গে বউরানীর দেখাসাক্ষাৎ সহজে হবে না।” “তা বললে চলবে না, কিছু উপায় করতেই হবে।” “উপায় মাথায় এসেছে।” “কী বলে দেখি ।” “বলতে পারব না।” "কেন বলে তো ?” “লজ্জা বোধ করছি।” “আমাকেও লজ্জা ?” “তোমাকেই লজ্জা ।” ●● “কারণটা শুনি ?” "দাদাকে ঠকাতে হবে । সে তোমার শুনে কাজ নেই।” “যাকে ভালোবাসি তার জন্যে ঠকাতে একটুও সংকোচ করি নে।” “ঠকানো বিদ্যেয় আমার উপর দিয়েই হাত পাকিয়েছ বুঝি ?” “ও-বিদ্যে সহজে খাটাবার উপযুক্ত এমন মানুষ পাব কোথায় ?” “ঠাকরুন, রাজিনাম লিখে-পড়ে দিচ্ছি, যখন খুশি ঠকিয়ে।” "এত ফুর্তি কেন শুনি ?” “বলব ? বিধাতা তোমাদের হাতে ঠকাবার যে-সব উপায় দিয়েছেন তাতে মধু দিয়েছেন ঢেলে। সেই মধুময় ঠকানোকেই বলে মায়া।” “সেটা তো কাটানোই ভালো।” # “সর্বনাশ ! মায়া গেলে সংসারে রইল কী ? মূর্তি রঙ খসিয়ে ফেললে বাকি থাকে খড়মাটি। দেবী, অবোধকে ভোলাও, ঠকাও, চোখে ঘোর লাগাও, মনে নেশা জাগাও, যা খুশি করে।” ‘. . . . . এর পরে যা কথাবার্তা চলল সে একেবারেই কাজের কথা নয়, এ গল্পের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই।