পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిరి: রবীন্দ্র-রচনাবলী “না, তার দরকার নেই।” “দরকার নেই তো কী ? তোমার দরকার না থাকে তো আমার দরকার অাছে বই-কি।” “তোমার আবার কিসের দরকার ?” “বা! আমার দাদাকে তোমার দাদা যা-কিছু ঠাওরাবেন সেটা বুঝি অমনি সয়ে যেতে হবে! আমার দাদার পক্ষ নিয়ে আমি লড়ব। তোমার কাছে হার মানতে পারব না। কাল তোমাকে ওঁর কাছে যেতেই হচ্ছে।” কুমু হাসতে লাগল। “বউরানী, এ ঠাট্টার কথা নয়। আমাদের বাড়ির অপবাদে তোমার আগৌরব। এখন চোখে মুখে একটু জল দিয়ে এসে খেতে যাবে। ম্যানেজার-সাহেবের ওখানে দাদার আজ নিমন্ত্রণ । আমার বিশ্বাস তিনি আজ বাড়ির ভিতরে শুতে আসবেন না, দেখলুম বাইরের কামরায় তার বিছানা তৈরি।” o এই খবরটা পেয়ে কুমু মনে মনে আরাম পেলে, তার পরক্ষণেই এতটা আরাম পেলে বলে লজ্জা বোধ হল । রাত্রে শোবার ঘরে মোতির মার সঙ্গে নবীনের ওই কথাটা নিয়ে পরামর্শ চলল। মোতির মা বললে, “তুমি তো দিদিকে আশ্বাস দিলে। তার পরে ?” “তার পরে আবার কী ? নবীনের যেমন কথা তেমনি কাজ। বউরানীকে যেতেই হবে, তার পরে যা হয় তা হবে।” নতুন-গড় রাজাদের পারিবারিক মর্যাদাবোধ খুবই উগ্র । এরা নিশ্চয় ঠিক করে আছেন যে, বিবাহ করে নববধূ তার পূর্ব-পদবীর চেয়ে অনেক উপরে উঠেছে ; অতএব বাপের বাড়ি বলে কোনো বালাই আছে এ কথা একেবারে ভুলতে দেওয়াই সংগত। এ অবস্থায় দুই দিক রক্ষা করা যদি অসম্ভব হয় তবে একটা দিক তো রাখতেই হবে। সেই দিকটা যে কোনটা তা নবীন মনে মনে পাকা করে রাখলে । যেখানে দাদার অধিকার চরম, সেখানে ও কোনোদিন দাদার সঙ্গে লড়াই বাধাতে সাহস করতে পারবে এ কথা আর কিছুদিন আগে নবীন স্বপ্নেও ভাবতে পারত না । স্বামীস্ত্রীতে পরামর্শ করে স্থির হল যে, কাল সকালে কুমু একবার মাত্র বিপ্রদাসের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা করে আসবে, এই প্রস্তাব মধুসূদনের কাছে করা হবে। যদি রাজি হয় এবং কুমুকে সেখানে পাঠানো যায় তা হলে তার পরে সেখান থেকে দু-চার দিনের মধ্যে তাকে না ফেরাবার সংগত কারণ বানানো শক্ত হবে না।