পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳ Ց রবীন্দ্র-রচনাবলী দেয়ালে হেলানো কুমুর ফোটোগ্রাফ। ষে বজ্র মাথায় পড়বে তারই বিদ্যুৎশিখা ওর চোখে এসে পড়ল। যে মাছকে বড়শি বিধেছে তারই মতো করে ওর বুকের ভিতরটা ধড়ফড়, ধড়ফড় করতে লাগল। ইচ্ছা করে ছবিটা থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, পারে না। একদৃষ্টে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকল, মুখ বিবর্ণ, দুই চোখে একটা দাহ, মুঠো দৃঢ় করে বন্ধ। একটা কিছু ভাঙতে, একটা কিছু ছিড়ে ফেলতে চায়। এ ঘরে থাকলে এখনই কিছু একটা লোকসান করে ফেলবে এই ভয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল । আপনার ঘরে গিয়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে পড়ে চাদরখানা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললে । রাত হয়ে এল। বাইরে থেকে বেহার খবর দিলে মহারাজ শোবার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছেন। বলবার শক্তি নেই যে যাব না। তাড়াতাড়ি উঠে মুখ ধুয়ে একটা বুটিদার ঢাকাই শাড়ি পরে গায়ে একটু গন্ধ মেখে গেল শোবার ঘরে। ছবিটা যাতে চোখে না পড়ে এই তার চেষ্টা। কিন্তু ঠিক সেই ছবিটার, সামনেই বাতি— সমস্ত আলো যেন কারও দীপ্ত দৃষ্টির মতো ওই ছবিকে উদ্ভাসিত করে আছে। সমস্ত ঘরের মধ্যে ওই ছবিটিই সবচেয়ে দৃশ্যমান। খামা নিয়মমত পানের বাট নিয়ে মধুসুদনকে পান দিলে, তার পরে পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। যে-কোনো কারণেই হোক আজ মধুসুদন প্রসন্ন ছিল। বিলাতি দোকানের থেকে একটা রুপোর ফোটোগ্রাফের ফ্রেম কিনে এনেছিল। গম্ভীরভাবে খামাকে বললে, “এই নাও।” খামাকে সমাদর করবার উপলক্ষেও মধুসূদন মধুর রসের অবতারণায় যথেষ্ট কার্পণ্য করে। কেননা সে জানে ওকে অল্প একটু প্রশ্রয় দিলেই ও আর মর্যাদা রাখতে পারে না। ব্রাউন কাগজে জিনিসটা মোড় ছিল । আস্তে আস্তে কাগজের মোড়কটা খুলে ফেলে বললে, “কী হবে এটা ?” মধুসূদন বললে, “জান না, এতে ফোটোগ্রাফ রাখতে হয়।” শুামার বুকের ভিতরটাতে কে যেন চাবুক চালিয়ে দিলে, বললে, “কার ফোটোগ্রাফ রাখবে ?” “তোমার নিজের। সেদিন সেই ষে ছবিটা তোলানো হয়েছে।” “আমার এত সোহাগে কাজ নেই।” বলে সেই ফ্রেমটা ছুড়ে মেজের উপর ফেলে দিলে । মধুসূদন আশ্চর্য হয়ে বললে, “এর মানে কী হল ?” “এর মানে কিছুই নেই।” বলে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠল, তার পরে বিছানা থেকে মেজের উপর পড়ে মাথা ঠুকতে লাগল। মধুসূদন ভাবল, খামার কম দামের