পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ 瞄 ۹۹ (ع জিনিস পছন্দ হয় নি, ওর বোধ করি ইচ্ছে ছিল একটা দামি গয়না পায়। সমস্ত দিন আপিসের কাজ সেরে এসে এই উপদ্রবট একটুও ভালো লাগল না। এ যে প্রায় হিসটিরিয়া। হিস্টরিয়ার পরে ওর বিষম অবজ্ঞা। খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, *ওঠে বলছি, এখনই ওঠে৷ ” খাম উঠে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল। মধুসুদন বললে, “এ কিছুতেই চলবে না।” মধুসূদন তামাকে বিশেষ ভাবেই জানে। নিশ্চয় ঠাওরেছিল একটু পরেই ফিরে এসে পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে মাপ চাইবে— সেই সময়ে খুব শক্ত করে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে হবে । կ. দশটা বাজল শু্যাম এল না। আর-একবার শু্যামার ঘরের দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ এল, “মহারাজ বোলায়া।” শু্যাম বললে, “মহারাজকে বলে আমার অসুখ করেছে।” মধুসূদন ভাবলে, আস্পর্ধ তো কম নয়, হুকুম করলে আসে না। মনে ঠিক করে রেখেছিল আরও খানিক বাদে আসবে। তাও এল না। এগারোটা বাজতে মিনিট পনেরো বাকি। বিছানা ছেড়ে মধুসূদন দ্রুতপদে স্যামার ঘরে গিয়ে ঢুকল। দেখলে ঘরে আলো নেই। অন্ধকারে বেশ দেখা গেল— শ্বামী মেজের উপর পড়ে আছে। মধুস্থদন ভাবলে এ-সমস্ত কেবল আদর কাড়বার জন্তে । গর্জন করে বললে, “উঠে এসে বলছি, শীঘ্ৰ উঠে এসো। ন্যাকামি কোরো না।” শু্যাম কিছু না বলে উঠে এল । Go 8 পরদিন আপিসে যাবার আগে খাবার পরে শোবার ঘরে বিশ্রাম করতে এসেই মধুসূদন দেখলে ছবিটি নেই। অন্যদিনের মতো আজ খাম পান নিয়ে মধুসূদনের সেবার জন্যে অাগে থাকতে প্রস্তুত ছিল না। আজ সে অকুপস্থিতও । তাকে ডেকে পাঠানো হল। বেশ বোঝা গেল একটু কুষ্ঠিতভাবেই সে এল। মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “টেবিলের উপর ছবি ছিল, কী হল ?” শু্যামা অত্যন্ত বিস্ময়ের ভান করে বললে, “ছবি ! কার ছবি ?” ভানের পরিমাণটা কিছু বেশি হয়ে পড়ল। সাধারণত পুরুষদের বুদ্ধিবৃত্তির পরে মেয়েদের অশ্রদ্ধা আছে বলেই এতটা সম্ভব হয়েছিল।