পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88२ . রবীন্দ্র-রচনাবলী একান্ত স্থখ আর-এক দিকে একান্ত দুঃখ প্রতিপক্ষতা অবলম্বন করিয়া পরস্পর বিমুখ হইয়া বসিয়া আছে। সে বয়সে সকল বিষয়ের একটা পরিপূর্ণ আদর্শ হৃদয়ে বিরাজ করিতে থাকে। গুণ দেখিলেই সর্বগুণ কল্পনা করি, দোষ দেখিলেই সর্বদোষ একত্র হইয়া পিশাচমুর্তি ধারণ করে। সুখ দেখা দিলেই ত্রিভুবনে দুঃখের চিহ্ন লুপ্ত হইয়া যায়, এবং দুঃখ উপস্থিত হইলে কোথাও সুখের লেশমাত্র দেখা যায় না। সংগীত সেইজন্য সর্বদাই উচ্ছসিত পঞ্চম স্বরে বাধা । বিদ্যাপতিতে সেইজন্য কেবল বসন্ত । রাধা অল্পে অল্পে মুকুলিত বিকশিত হইয়া উঠিতেছে। সৌন্দর্য ঢলঢল করিতেছে। শু্যামের সহিত দেখা হয় এবং চারি দিকে একটা যৌবনের কম্পন হিল্লোলিত হইয় উঠে। খানিকটা হাসি, খানিকটা ছলনা, খানিকট আড়চক্ষে দৃষ্টি । একটু ব্যাকুলত, একটু আশানৈরাতের আন্দোলনও আছে। কিন্তু তাহ নিতান্ত মর্মঘাতী নহে। চণ্ডীদাসের যেমন— নয়ন চকোর মোর পিতে করে উতরোল, নিমিখে নিমিথ নাহি হয়— বিদ্যাপতিতে সেরূপ উতরোল ভাব নয়— কতকটা উতলা বটে। কেবল আপনাকে আধখানা প্রকাশ এবং আধখানা গোপন ; কেবল হঠাৎ উদাম বাতাসের একট। আন্দোলনে অমনি খানিকটা উন্মেষিত হইয় পড়ে। বিদ্যাপতির রাধা নবীন নবস্কুট । আপনাকে এবং পরকে ভালো করিয়া জানে না। দূরে সহাস্য সতৃষ্ণ লীলাময়ী ; নিকটে কম্পিত শঙ্কিত বিহবল ৷ কেবল একবার কৌতুহলে চম্পক-অঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়া অতিসাবধানে অপরিচিত প্রেমকে একটুমাত্র স্পর্শ করিয়া অমনি পলায়নপর হইতেছে। যেমন একটি ভীরু বালিকা স্বাভাবিক পশুক্ষেহে আকৃষ্ট হইয়া অজ্ঞাতস্বভাব মুগকে একবার সচকিতে স্পর্শ করে, একবার পালায়, ক্রমে ক্রমে ভয় ভাঙে, সেইরূপ । যৌবন, সেও সবে আরম্ভ হইতেছে, তখন সকলই রহস্যপরিপূর্ণ। সদ্য-বিকচ হৃদয় সহসা আপনার সৌরভ আপনি অনুভব করিতেছে ; আপনার সম্বন্ধে আপনি সবেমাত্র সচেতন হইয়া উঠিতেছে ; তাই লজ্জায় ভয়ে আনন্দে সংশয়ে আপনাকে গোপন করিবে কি প্রকাশ করিবে ভাবিয়া পাইতেছে না— কবহু বাধয়ে কচ কবহু বিথারি । কবহু বাপয়ে অঙ্গ কবহু উঘারি । হৃদয়ের নবীন বাসনাসকল পাখী মেলিয়া উড়িতে চায়, কিন্তু এখনও পথ জানে নাই। কৌতুহল এবং অনভিজ্ঞতায় সে একবার ঈষৎ অগ্রসর হয় আবার জড়সড়