পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( o R রবীন্দ্র-রচনাবলী २ শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের ‘সিরাজদ্দৌলা পাঠ করিয়া কোনো অ্যাংলোইণ্ডিয়ান পত্র ক্রোধ প্রকাশ করিয়াছেন। স্বজাতি সম্বন্ধে পরের নিকট হইতে নিন্দোক্তি শুনিলে ক্রোধ হইতেই পারে। সমূলক হইলেও। কিন্তু আমাদের সহিত উক্ত পত্রসম্পাদকের কত প্রভেদ ! আমাদিগকে বিদেশীলিখিত নিন্দোক্তি বাধ্য হইয়া অধ্যয়ন করিতে হয়, তাহ মুখস্থ করিয়া পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু অক্ষয়বাবুর সিরাজদৌল কোনো কালে সম্পাদক মহাশয়ের সন্তানবর্গের পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত হইবার সম্ভাবনা দেখি না। বিশেষত অক্ষয়বাবু এই গ্রন্থ যখন বাংলায় রচনা করিয়াছেন তখন ইংরাজ পাঠককে ব্যথিত করিবার সম্ভাবনা আরও স্থদুরপরাহত হইয়াছে। কিন্তু এই বাংলা রচনাতেই সমালোচক আক্রোশের কারণ আরও অধিক দেখিতে পাইয়াছেন। তিনি আশঙ্কা করেন, ভাষানভিজ্ঞতাবশত যে-সকল বাঙালি পাঠকের নিকট মূল দলিল এবং ঐতিহাসিক প্রমাণসকল আয়ত্তাতীত, ‘সিরাজদ্দৌলা গ্রন্থ পাঠে ইংরাজদিগের আচরণের প্রতি তাহীদের অশ্রদ্ধা জন্মিতে পারে। কিন্তু ইহ। ইতিহাস ; যুক্তির দ্বারা প্রমাণের দ্বারা ইহাকে আক্রমণ করিয়া ধ্বংস করিয়া দেওয়া কঠিন নহে। এমন-কি, আইনের কোনে অভাবনীয় ব্যাখ্যায় ইতিহাসসমেত ঐতিহাসিককেও লোপ করিয়া দেওয়া অসম্ভব না হইতে পারে। কিন্তু জিজ্ঞাস্য এই যে, তুলনায় কোনটা গুরুতর— ইংরাজ লেখকগণ গল্পে প্রবন্ধে ভ্রমণবৃত্তান্তে প্রাচ্যজাতীয়দের প্রতি নানা আকারে যে নিন্দ ও অবজ্ঞা প্রকাশ করিতেছেন, যাহা অধিকাংশ স্থলেই যুক্তিগত তথ্যগত নহে, জাতীয় সংস্কারগত— অধিকাংশ স্থলেই যাহার সুগভীর মূল কারণ স্পেকুটেটর যাহাকে বলিয়াছেন “The dislike for aliens”— ইহাই, অথবা বাংলা ইতিহাস যাহা শিক্ষিত বাঙালিদেরও বারো আন৷ লোক বাংলায় লিখিত বলিয়াই পড়িতে অনাদর করিবে, তাহ ? আমাদের প্রতি ইংরাজের যে ধারণা জন্মিয় থাকে তাহার ফল প্রত্যক্ষ— কারণ, আমরা নিরুপায়ভাবে ইংরাজের হস্তগত। একে দুর্বল অধীন আজ্ঞাবহের প্রতি স্বভাবতই উপেক্ষ জন্মে এবং সেই উপেক্ষা সদবিচারের ব্যাঘাত না করিয়া থাকিতে পারে না, তাহার পরে শিশুকাল হইতে ইংরাজসস্তান যে-সকল গ্রন্থ পাঠ করে তাহাতে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে বীভৎস এবং বিভীষিকার উদ্রেক করিয়া দেয়। ভারতবর্ষের