পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? (? & রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রভাব নাই। সাধারণে এখনকার সমালোচনা কেবল বিজ্ঞাপনস্তম্ভ সজ্জিত করিবার আয়োজন-স্বরূপে দেখে । যথার্থ রসবোধ এবং সূক্ষ্ম বিচার প্রকাশ পায় এমন সমালোচনা বহুকাল দেখা যায় নাই। গ্রন্থসমালোচনার ভার অনেক সময়ে অযোগ্য লোকের হস্তে ন্যস্ত হয় এবং অনেক কৃতবিদ্য লেখকও অত্যুক্তি কাল্পনিকতা এবং অবাস্তর প্রসঙ্গে তাহীদের সমালোচনা সমাচ্ছন্ন করিয়া ফেলেন ; গ্রন্থের অন্তর্গত প্রকৃত সাহিত্যপদার্থকে প্রাধান্য না দিয়া তাহার আনুষঙ্গিক নীতি অথবা অন্য কোনো তত্ত্বকথার অবতারণা করিয়া পাঠকের চিত্তকে যথার্থ সাহিত্যপথ হইতে ভ্ৰষ্ট করেন। অন্য হিসাবে তাহার গৌরব থাকিতে পারে, কিন্তু সমালোচনার হিসাবে তাহার মূল্য নাই। তাহাতে পাঠকদের মনে রসবোধ বা নির্বাচনশক্তির চর্চা হয় না। ‘সেইজন্য এখনকার সাহিত্যে বিস্তর স্বেচ্ছাচারিতা এবং ইতর ভাবের প্রাদুর্ভাব হইয়াছে। এখনকার কোনো রচনা কোনো যথার্থ শ্রদ্ধেয় সমালোচকের হস্তে কোনোরূপ প্রতিঘাত প্রাপ্ত হয় না— সকলেই স্বপ্রধান হইয়া উঠিয়াছেন এবং সাহিত্যক্ষেত্র জঙ্গলে সমাকীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। সাহিত্যের মধ্যে সংযমের, সৌন্দর্যের, শিষ্টতার এবং উচ্চ আদশের আবশ্যক কেহ স্মরণ করাইয়া দিতেছেন না, স্বাভাবিক বিচারশক্তির সহিত নিরপেক্ষভাবে দগুপুরস্কার বিধান করিবার কেহই নাই, পত্রে এবং সংবাদপত্রে উৎসাহ অত্যন্ত মুক্তহস্তে বিতরিত হইয়া থাকে এবং রাজকোষের শূন্য অবস্থায় কাগজের নোট যেরূপ অজস্র অথচ অনাদৃত হইয় উঠে এই-সকল প্রাচুর্যবিশিষ্ট সমালোচনাও সাধারণের নিকট সেইরূপ প্রায় বিনামূল্যে বিক্রীত হয়। ‘এই বর্তমান দুরবস্থার উল্লেখ করিয়া কাহারও প্রতি দোষারোপ করা আমার অভিপ্রায় নহে। বিশেষত এ দোষের অংশ যখন আমাদিগের সকলকেই বহন করিয়া লইতে হইবে তখন ইহার মধ্যে নিজের সাস্তুনা বা শ্লাঘার কারণ কিছুই দেখি না। কিন্তু এই অরাজকতার চিত্র মনের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া লইলে পাঠকগণ বুঝিতে পরিবেন, সাহিত্যসিংহাসনে কে আমাদের রাজা ছিলেন এবং তাহার অভাবে সে শাসনভার গ্রহণ করিবার যোগ্য ব্যক্তি কেহই উপস্থিত নাই। ইহাও বুঝিতে পারিবেন, বঙ্কিম যখন আমাদের সাহিত্যতরীর কর্ণধার হইয়াছিলেন তখন তরণী কেন এমন আশ্চর্যবেগে অগ্রসর হইয়াছিল, আর আজই বা কেন সে যথেচ্ছ ভাসিয়া যাইতেছে এবং নানা বাতাসে ঘুরিয়া মরিতেছে। আমাদের কাহারও সে ক্ষমতা নাই, সে সাহস নাই, সে প্রতিভা নাই। আমরা যদি বা স্ব স্ব শক্তি-অনুসারে কেহ কেহ কোনো কোনো বিষয়ে উৎকর্ষ লাভ করিতে পারি, কিন্তু বর্তমানের গতিকে নিয়মিত করা, সমস্ত সাহিত্যকে চালনা করা আমাদের সাধ্যায়ত্ত নহে। বঙ্গদর্শন তখনকার