পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় 《 (이 “এইজন্ত মাঠের মধ্যে আমার রাজসিংহ পড়িবার বড়ে সুযোগ ঘটিয়াছিল। বইখানি আমার হাতে ছিল বটে— কিন্তু আসল ব্যাপারটি বাধানো গ্রন্থের কালে মলাটের কারণপ্রাচীর লঙ্ঘন করিয়া সমস্ত মাঠ এবং সমস্ত আকাশ পরিব্যাপ্ত করিতেছিল । বঙ্কিমবাবু যেন এই দিগন্তপ্রসারিত ধূসর মৃত্তিকাপটের উপর তাহার বইখানি ছাপাইয়া ওই মধ্যাহ্নরৌদ্রের সোনার-জল-করা অনন্ত নীলা কাশের মলাটে বাধাইয়। রাখিয়াছেন। ‘কত দিনের ব্যবধান, কত দূরের কথা, এ মানুষেরাই বা কোথায় এবং এই-সকল ঘূর্ণাবর্তসংকুল গ্রেগামী প্রবল ঘটনাপ্রবাহই বা আমরা মূনিসিপালিটির পুরপালিত বঙ্গসস্তান কোনখানে দেখিতে পাইব ! কোথায় বা সেই মোগলের বিলাসতরঙ্গিত দিল্লি, কোথায় বা সেই রাজপুতানার অনুর্বর মরুভূমি ও দুর্গম গিরিমাল। যাহার কঠিন স্তনের বিরল স্তন্তরসে রাজপুত সিংহশাবকের নির্জনে লালিত হইতেছিল ! সুবিশাল প্রাস্তর এবং অবারিত আকাশ নহিলে কি ঘনহর্ম্যপীড়িত অবকাশবিহীন ট্রামরথচক্রমুখরিত কলিকাতায় এ-সমস্ত কল্পনাপট প্রসারিতভাবে ধারণ করিবার স্থান আছে ? ‘সেইজন্যই মনে করিতেছি সৌভাগ্যক্রমে রাজসিংহ গ্ৰন্থখানি কলিকাতায় প্রথম আমার হস্তগত হইবামাত্রই অপহৃত হইয়া যায়। চৌরের উদ্দেশে গালি পাড়িবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সেটা পাছে আমার কোনো নিকট আত্মীয় অথবা প্রিয় আত্মীয়ার গায়ে বাজে এই ভয়ে ধৈর্যরক্ষাপূর্বক বিরত ছিলাম, আজ তাহাকে অস্তরের সহিত মার্জনা করিলাম । * ‘কলিকাতায় অঙ্গচালনার অনবসর এবং আহাৰ্যসামগ্রীর প্রাচুর্যবশত ক্ষুধামান্দ্য ঘটে, এইজন্য পরিতৃপ্তির সহিত কোনো খাদ্যের স্বাদগ্রহণ করা যায় না। কেবল শারীরিক নহে, সেখানে মানসিক অমরোগেরও বড়ো প্রাদুর্ভাব। এত খবর, এত কথা, এত বক্তৃত। মনের মধ্যে অবিরল বর্ষিত হইতেছে— মধ্যে মধ্যে কিঞ্চিৎ অবকাশ লইয়া৯স্থির শাস্তভাবে কোনো কথা পরিপাক করিবার অবসর এত অল্প, উদার কল্পনাক্ষেত্রের মধ্যে মানসিক অঙ্গচালনা করিবার উপলক্ষ এত দুর্লভ যে, মনের ক্ষুধা নষ্ট হইয়া যায়, ঝাল টক চাটনি ভালো লাগে, কিন্তু ভালো জিনিসের ভালোরূপ রসগ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। পল্লীগ্রামের আকাশ এবং অবকাশের মধ্যে অসিলে ক্ষুধা সঞ্চয় হয়, প্রত্যেক জিনিসের পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় এবং ভূক্ত রস রক্তের সহিত মিশ্রিত হইয়া স্বাস্থ্যস্ফুর্তি সঞ্চার করে। ‘সেইজন্য মাঠের মধ্যে যখন রাজসিংহ পড়িলাম সমস্ত বইখানি এমন নিঃশেষ